আগে পরিবেশ বাঁচাতে হবে
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় শতাধিক কারখানার দূষিত-বিষাক্ত বর্জ্য, সেই সাথে একশ্রেণীর বালু ব্যবসায়ীর তাণ্ডবে বা আগ্রাসী আচরণে স্থানীয় খিরু নদী যেন নিছক মরা খাল। মিডিয়ায় এ ব্যাপারে বহুবার খবর প্রচারিত হলেও দূষণের মহোৎসব ও নদী হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থামছে না। কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে বেশির ভাগ স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বা কারখানায় বর্জ্য শোধন প্রকল্প (ইটিপি) বন্ধ থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ দিকে জলাশয়ের বর্জ্য আলকাতরার মতো ঘোর কৃষ্ণবর্ণের প্রবাহের মাধ্যমে সর্বত্র মারাত্মক দুর্গন্ধের বিস্তার ঘটাচ্ছে আর লোকজন পেটের পীড়া ও চর্মরোগসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে জনস্বাস্থ্য এবং প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। নয়া দিগন্তের ভালুকা সংবাদদাতার পাঠানো সচিত্র প্রতিবেদনে এই তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে এবার।
ভালুকার বিভিন্ন জলাশয়ের তীরে বসবাসরত লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত শতকের নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত খিরু নদীটি ছিল নাব্য। তখন এ নদী দিয়ে শুধু নৌকা নয়, লঞ্চ পর্যন্ত চলতে পারত। কয়েক হাজার মানুষ এর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। বিরাট জনপদের জনগণের যাতায়াতের একক মাধ্যম ছিল এই নদীপথ। পাশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ও বরমির মতো স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা বিবিধ পণ্য ক্রয় করে খিরু নদী দিয়ে নৌকায় নিয়ে আসতেন; কিন্তু ভালুকায় নানা স্থানে নির্বিচারে কলকারখানা স্থাপনের ফলে বর্জ্য ও পলিমাটি জমে নদী সঙ্কুুচিত হয়ে পড়ে। তদুপরি, বিশেষত কিছু বালু কারবারির তাণ্ডবে ঐতিহ্যময় নদীপথটি ভরাট হয়ে যায় এবং বর্তমানে সরু খালে পর্যবসিত হয়েছে। তার ওপর এখন ৫০টিরও অধিক ডাইং ফ্যাক্টরি ইটিপি বন্ধ রাখায় বর্জ্যবিষ খাল-বিলের মাধ্যমে নদীতে এসে পড়ছে। দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাবশালীরা খিরু নদীর দু’তীরে ব্যবসার বালু স্তূপ করে রাখায় সেটি ভরাট ও সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
নদীর ব্রিজের কাছে ১৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একটি ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্জ্যে খিরু নদীর পানিদূষণের সূচনা। সম্প্রতি ভালুকা পৌর এলাকায় খালপাড়ে চালু হয়েছে আরেকটি কারখানা। এখানকার ইটিপি যন্ত্রটি নিছক ‘লোক দেখানো’ বলে জানা গেছে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণ লোকজনের সাথে বিশেষ সম্পর্ক রেখে বর্জ্য নদীতে ফেলায় ‘কোনো সমস্যা হয় না’ বলে অভিযোগ। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করা হলে ভুয়া মামলা ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় কাঁঠালি গ্রামের একটি ডাইং ফ্যাক্টরির ইটিপি ড্রেন শুকিয়ে গেলেও ছাড়পত্র মিলেছে ‘ইটিপি কার্যক্রম সচল’। ভালুকায় হবিরবাড়ি, ভরাডোবা, মল্লিকবাড়ি, মেদুয়ারি প্রভৃতি ইউনিয়নে শতাধিক কারখানার কালো রঙের বিষাক্ত বর্জ্য খাল পথে খিরু নদীর পানিতে মিশে থাকায় খালপাড়ে মাটি পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এসব কারখানার মধ্যে টেক্সটাইল ডাইং ছাড়াও আছে রাসায়নিক ও কীটনাশকের ফ্যাক্টরি। কোথাও কোথাও একাধিক মিলের বর্জ্য ভূগর্ভের পানিতে মিশে গেছে। ফলে নলকূপেও ময়লা বিষাক্ত পানি বের হচ্ছে। এ পানি পান করে ডায়রিয়াসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হয় মানুষকে।
এ দিকে বর্ষা এলেই কয়েক শ’ ট্রলারে করে বালু আনা হয় ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা থেকে। সে বালু স্থানীয় থানা সংলগ্ন নদীর চর ও ব্রিজের পাশে রাখায় খিরু তার নাব্য হারিয়ে ফেলছে। ফলে চাষাবাদের সেচ কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাদের নামে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা ‘আইন মেনেই’ কাজ করছেন। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য, ডাইং মিলের বর্জ্যে ইউরিয়া অত্যধিক বলে এতে ধানগাছ খুব বাড়লেও পাতাপচা রোগে ফলন বিনষ্ট হয় এবং বর্জ্য ধানে মিশে গেলে সে ভাত খেয়ে মানব দেহের ক্ষতি হয় মারাত্মক। উপজেলা চেয়ারম্যান দূষণ মোকাবেলায় নাগরিক আন্দোলনের পরামর্শ দেন। ইউএনও বলেছেন, পরিবেশ রক্ষার্থে ‘যা যা করণীয়’, প্রশাসন তা করবে।
আমরা মনে করি, সবাই মিলে সর্বাগ্রে পরিবেশ বাঁচাতে হবে। অন্যথায় ক্ষতি হবে সবার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা