২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

জাতির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই

-

স্থানীয় সরকারের নিম্নতম ধাপ- ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন চলছে। গত রোববার অনুষ্ঠিত হলো দেশের ৮৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এটি ছিল পর্যায়ক্রমিক নির্বাচনের চতুর্থ ধাপ। এবারের নির্বাচনের যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য এর সবকিছুই রোববারের নির্বাচনেও দেখা গেছে। দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা, ব্যালট ছিনতাই, কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয়া, গোলাগুলি, বোমাবাজি, এমনকি নির্বাচনী কর্মকর্তার বিশেষ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়া, নৌকায় ভোট নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্টকে দেখিয়ে ব্যালট বাক্সে ফেলতে বাধ্য করা- এমনই নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অরাজকতার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো এ পর্বের ভোট গ্রহণ। গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনজন। আটক করা হয়েছে ৭৪ জনকে। ভোট বর্জন করেছেন অনেক প্রার্থী। অনিয়মের অভিযোগে অন্তত ১৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে হামলা, সংঘর্ষ ও কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে জাল ভোট দেয়ার মতো অনিয়মের ছবি তুলতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। কারো বা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি মন্ত্রীর মতো দাপট নিয়ে চলেন যে ছাত্রলীগের নেতারা, তাদের মধ্যে একজন সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকও হামলায় দু’টি আঙুল হারিয়েছেন। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি অনেক প্রার্থী। অনেক কেন্দ্রে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো এজেন্টের উপস্থিতি প্রায় ছিলই না। তারপরও নির্বাচন কমিশন রীতিমাফিক দাবি করেছে- নির্বাচন হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে এবং তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও বিএনপিসহ কয়েকটি দল বর্জন করায় এবারের ইউপি নির্বাচন পুরোপুরিই একদলীয় হয়ে পড়েছে। মারামারি, কাটাকাটি যা কিছু হচ্ছে সবই একটি দলেরই পক্ষ-বিপক্ষ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এই নির্বাচন ঘিরে কতটা নিয়ন্ত্রণহীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন; তার নমুনা দেখা গেছে বিভিন্ন স্থানে চাপ দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা, বাড়িছাড়া করা, পা ভেঙে দেয়া- এমনকি হত্যার হুমকি-ধমকি, প্রকাশ্যে একে-৪৭ রাইফেল প্রদর্শন করে জবরদস্তিমূলক ভোট নেয়ার মতো সব ঘটনার মধ্য দিয়ে। এমনকি পুরো পুলিশের থানা উড়িয়ে দেয়ার হুমকিও এসেছে কুষ্টিয়ার এক প্রার্থীর জবানে। কিশোরগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সভায় এক নেতা একে-৪৭ রাইফেলের ভয় দেখিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার নির্দেশ দেন। কর্মী-সমর্থকদের অভয় দিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের। পুলিশ আমাদের। সরকার আমাদের।’
সবগুলো ঘটনাই জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত। এগুলো বর্তমান সরকারের সময়কার নির্বাচনের ঐতিহাসিক নমুনা হবে। মূলত গোটা জাতিরই কোনো সম্পর্ক নেই এই নির্বাচনের সাথে। আর এটাই এবারের ইউপি নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত করার জন্য দায় নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায়, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটিই একমাত্র সত্য নয়। এর পেছনে কাজ করেছে মূলত রাজনীতি ও ক্ষমতার দুর্বৃত্তায়ন। রাজনীতিকরাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সব সম্ভাবনা রুদ্ধ করে দিয়েছেন বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণের জন্য তাদেরই দায় সর্বোচ্চ।
এ ধরনের নির্বাচনে গণতন্ত্র যেমন থাকে না, তেমনি জন-আকাক্সক্ষা পরিপূরণেও সহায়ক হয় না। উল্লিøখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে গত এক যুগের প্রায় সব নির্বাচনই অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ অর্থাৎ নাগরিকরা এমন অর্থহীন ও তামাশার নির্বাচন আর দেখতে চান না।


আরো সংবাদ



premium cement