২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত

সত্য উদঘাটনে সফল হোক বিজ্ঞান

-

গত ২৫ ডিসেম্বর শনিবার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এ দিন মহাকাশে পাঠানো হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল স্পেস টেলিস্কোপ। মানবজাতির চন্দ্র অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী জেমস ওয়েবের নামে নামকরণ করা এই টেলিস্কোপটি তার পূর্বসূরি হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে তিন গুণ বড় এবং ১০০ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। প্রায় ৩০ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার বিজ্ঞানীরা এটি তৈরি করেছেন। ব্যয় হয়েছে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ১০ বছর মেয়াদি এই মিশনটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
৩০ বছরের মেয়াদে ১৯৯০-এর দশকে পাঠানো হাবলের মেয়াদ ফুরিয়ে আসার আগেই তার উত্তরসূরি হিসেবে জেমস ওয়েবকে পাঠানো হলো। হাবল যেখানে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করত সেখানে জেমস ওয়েব পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরের মহাশূন্যে ভেসে মাইনাস ২৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাজ করবে। এর ফলে এর যে ইনফ্রারেড রশ্মি দিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সেটি নিখুঁতভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। হাবল বিশ্বাসীকে মহাকাশের লাখো নতুন গ্রহ-নক্ষত্রের সন্ধান দিয়েছে, দিয়েছে নতুন নতুন গ্যালাক্সির সন্ধানও। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, জেমস ওয়েব এক হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে কথিত যে বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল সেই সময়ের তথ্যও উদঘাটনে সহায়ক হবে। অর্থাৎ বিশ্বজগৎ সৃষ্টির পর এতে যা যা আছে- গ্যালাক্সি, গ্রহ-তারা, এমনকি মানুষসহ প্রাণিকুল পর্যন্ত সবকিছুই কী করে এলো তারও আভাস পাওয়া যেতে পারে জেমস ওয়েবের পর্যবেক্ষণ থেকে।
জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা ও তার ফলাফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ আছে। কারণ সবাই মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য জানতে চায়। বিশেষ করে আমরা যারা ইসলামে বিশ্বাস করি তাদের কাছে এটি একধরনের ধর্মীয় বিষয়ও। ইসলাম মূলত চিন্তাশীলদের ধর্ম। পবিত্র কুরআনে সত্য অনুসন্ধান ও অনুধাবনের জোরালো তাগিদ দেয়া হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে বেছে নেয়া হয়েছে আকাশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সত্যের সূত্র উদঘাটনের বিষয়টি। বলা হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং দিবা-রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবান মানুষের জন্য নিদর্শন রয়েছে; যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লøাহকে স্মরণ করে এবং মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। সব পবিত্রতা একমাত্র তোমারই। আমাদেরকে তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১৯০-১৯১)
এ ধরনের বেশ কিছু আয়াতে কুরআন আমাদেরকে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধির তাগিদ দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটাই যে, ইসলাম গবেষণার ওপর সীমাহীন গুরুত্বারোপ করলেও কুরআনের অনুসারী বলে আমরা যারা নিজেদের দাবি করি তারাই অর্থাৎ মুসলিমরাই বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনুশীলনে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। অমুসলিমরা কিন্তু এই কাজটি নিষ্ঠার সাথে করছে এবং পার্থিব সব ক্ষেত্রে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছে। আমরা বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার বিষয়গুলোকে সব সময় স্বাগত জানাই। কারণ সত্য উদঘাটন পুরো মানবজাতির জন্য কল্যাণকর বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক সাম্প্রতিক আবিষ্কারের মধ্যে দেড় হাজার বছর আগে কুরআনে উল্লিøখিত তথ্যসূত্রের প্রতিফলন দেখতে পাই। কুরআন যে অভ্রান্ত তা প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানের আবিষ্কারের দৃষ্টান্ত হয়তো সবার জন্য প্রয়োজন নেই, তবে এতে দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের মনের দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব কিছুটা হলেও কেটে যাওয়ার সম্ভাব্যতা রয়েছে।
আগামী ১০ বছরে জেমস ওয়েব বিশ্বাবাসীকে যেসব তথ্য সরবরাহ করতে যাচ্ছে সেসব জানার জন্য অপেক্ষায় থাকতেই পারি।

 


আরো সংবাদ



premium cement