২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সীমান্তে একতরফা লাশ পড়ছে

বিএসএফের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই

-

সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধে প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য নেই। নিয়মিত বিরতিতে ভারতের সাথে সীমান্তের প্রায় প্রত্যেকটি পয়েন্টে একতরফা বাংলাদেশীদের লাশ পড়ছে। এ নিয়ে উভয় দেশের দায়িত্বশীল কর্ত্যাব্যক্তিদের বক্তব্যে প্রহসন ছাড়া অন্য কিছুই নেই। বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা রোধের বদলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের আচরণ অপেশাদার ও উদ্ধত্যপূর্ণ। অথচ এই বিএসএফের সদস্যরা পাকিস্তান, চীন, নেপালসহ ভারতের সাথে থাকা অন্যান্য সীমান্তে দায়িত্ব পালন করে। কখনো শোনা যায় না, তারা ওই সব সীমান্তে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের হত্যা করছে। বরং বিএসএফ ওই সব সীমান্ত আন্তর্জাতিক আইন-কানুন, বিধিবিধান মেনে চলে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ব্যাপার যে, ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও আমলারা কথায় কথায় বাংলাদেশের সাথে মধুর বন্ধুত্বের কথা উল্লেøখ করেন। আর কাজের ক্ষেত্রে গ্রহণ করেন সম্পূর্ণ বিপরীত নীতি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার পাশাপাশি নানা অসৌজন্যমূলক আচার-আচরণও করেছে। এ ধরনের অন্যায় অশোভন আচরণ তারা সাধারণত বাংলাদেশীদের সাথে করতে অভ্যস্ত। ১৪ ডিসেম্বর ঝিনাইদহের বাঘাডাঙ্গা সীমান্তে গুলি করে হত্যা করে ৩০ বছর বয়সী মিকাইল হোসেনকে। তার আগে ১২ নভেম্বর লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তে তারা হত্যা করে ৪০ বছর বয়সী মো: ভাসানি ও ৪২ বছর বয়সী ইদ্রিস আলীকে। পরের দিন একই জেলার সিঙ্গিমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ঘরবাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় দুই বাংলাদেশী আহত হন। ঘটনার সময় তারা মাতাল ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এসব ঘটনায় বিএসএফের মানসিক অবস্থাটা বোঝা যায়। তারা এ দেশের মানুষকে হত্যা করা, সীমান্তে বাড়িঘরের মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো ও নিপীড়ন চালানোকে কোনো ধরনের বেআইনি কিছু বলে মনে করে না। এমন মানসিক অবস্থার কারণ হচ্ছে- বিচার না চাওয়া বা অপরাধের শাস্তি না পাওয়া। যা খুশি তা করা যায় এমন ভাবনা থেকে এমন অসম্মানজনক আচরণ তারা করে চলেছে।
বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিএসএফ সীমান্তে ৪৮ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ৪২ জনকে সরাসরি গুলি চালিয়েছে, বাকি ছয়জনকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না’ বলে বিএসএফের প্রধানরা বরাবর বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে যান। কার্যক্ষেত্রে তারা এর বিপরীত আচরণ করে। তারা রীতিমতো মহা আনন্দে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। অন্য দিকে নিপীড়ন চালানোর ঘটনাগুলো আরো অবমাননাকর। তারা নানা অভিনব কায়দায় বাংলাদেশীদের ওপর অত্যাচার করে থাকে। দেখা গেছে, বিবস্ত্র করে তেল মেখে পেটানো হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনাগুলোতে তাচ্ছিল্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। নতুন করে সীমান্ত হত্যার ঘটনার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরের মতো মন্তব্য করেছেন, সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক। এ ধরনের গতানুগতিক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সময় পার করে যাচ্ছেন। বাস্তবে তারা কূটনৈতিক চ্যানেলে দরকষাকষি করলে একতরফা হত্যাকাণ্ড চালানো সম্ভব হতো না।
এ দিকে ভারতীয় হাইকমিশনারের মন্তব্য আরো চাতুর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত সরকার সজাগ রয়েছে। এই ধরনের বক্তব্যের অর্থ কী? সরকার সজাগ থাকলে সীমান্তে বাংলাদেশীদের লাশ কিভাবে পড়ে? ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি যুক্তি দেয়া হয়, তারা ‘জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ অবলম্বন’ হিসেবে গুলি চালায়। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশীদের হামলায় এ পর্যন্ত কতজন বিএসএফ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন? সেই পরিসংখ্যানটি কোথায়। বাংলাদেশী চোরাকারবারিরা হামলা চালিয়ে বিএসএফের সদস্যদের হত্যা করছে এমন খবর দেখা যায় না। বরং খবর রয়েছে- বিএসএফের একটি অংশের সাথে রয়েছে চোরাকারবারিদের যোগসাজশ। বিএসএফ নিজেদের বাঁচানোর জন্য গুলি ছুড়লে ভারতের প্রত্যেকটি সীমান্তে লাশ পড়ার কথা। সীমান্তে কতজন পাকিস্তানি, কতজন চীনা নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ, সেই খবরও নেই। মোট কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ তার নাগরিকদের হত্যার বদলা নেয়ার চিন্তা করে না। এ জন্য ফেলানীর মতো কিশোরীরা গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় লাশ হয়ে লটকে থাকে। বিএসএফের যেসব সদস্য তাকে গুলি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ক্রিমিনাল অফেন্সের অভিযোগ আনা যায়নি। এমন অন্যায় ও গায়ের জোরের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। আমরা এমন অন্যায়ের সুষ্ঠু প্রতিকার প্রত্যাশা করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement