২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দিনে ‘রাজা’ রাতে প্রহরী

শখের দুনিয়া এত বিচিত্র!

-

এখন রাজতন্ত্রের নয়, গণতন্ত্রের যুগ। আমাদের দেশেও রাজার শাসন নেই। তবে ‘রাজা’ আছেন, যিনি দিনে এমন অসামান্য ভূমিকায় অভিনয় করলেও রাতে তিনি সামান্য প্রহরী। ‘শখের তোলা লাখ টাকা’ প্রবাদটি যেন তার ক্ষেত্রে সত্য হয়েছে। আবদুল কাদের নামের এই অদ্ভুত শৌখিন ব্যক্তির বাড়ি রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার চৌপুকুরিয়া গাঁয়ে। বাস্তবে তিনি যা-ই হন না কেন, শখ করে নিজেকে পছন্দ করেন রাজা ভাবতে। সত্যিই, শখের পৃথিবী খুব বিচিত্র!
একটি জাতীয় দৈনিক এ খবর দিয়ে লিখেছে, ‘প্রায় প্রতিদিন সকালে রাজার পোশাকে, মাথায় বর্ণিল তাজ, হাতে তলোয়ার নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে রাজার বেশে ছোটেন ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ। প্রথমে দেখে মনে হতে পারে, তিনি সত্যিকারের একজন রাজা।’ মানুষ তাকে ‘রাজা’ হিসেবেই চেনেন ও জানেন। প্রহরীর চেয়ে তার বড় পরিচয় ‘রাজা’। স্বঘোষিত এ রাজার ঘরে স্ত্রী ছাড়াও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। অর্ধশতক আগে সিনেমা ও যাত্রায় বারবার রাজাকে দেখে রাজা হওয়ার ইচ্ছা হয় তার। তাই কিনলেন রাজ পোশাক ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সাজসরঞ্জাম। এরপর ‘রাজা’ সেজে ঘুরতে থাকেন একা একাই। তবে একপর্যায়ে যোগ হলেন উজির ও সেনাপতি, যারা দু’জনই বর্তমানে পরলোকগত। তার পরও তিনি একা একা ঘুরছেন রাজবেশে। তাকে দেখে সব বয়সী মানুষ খুব খুশি। তাকে খুব শৌখিন মানুষ মনে করা হয়। গ্রামবাসীর ভাষায়, ‘বাস্তবে নৈশপ্রহরী হলেও তিনি একজন স্বঘোষিত রাজা। মানুষের ঘরে গিয়ে তাদের সমস্যা-সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত হন। তাদের সাহায্য করতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালান তিনি।’ আর আবদুল কাদেরের স্বজন বলেছেন, তিনি সত্যিকারের রাজা না হলেও মানুষ তাকে চেনে ‘রাজা’ বলে। তিনি পরিবার থেকে সহায়তা পান এবং এতে সবাই গর্বিত। দিনভর রাজার সাজে ঘুরেফিরে সন্ধ্যায় বাস্তব জীবনে ফেরেন। তখন নিছক প্রহরীর পোশাক পরে বাঁশি বাজাতে বাজাতে ডিউটি করতে ছুটে যান স্থানীয় বাজারে। তার অল্প বেতনে কোনোমতে চলছে ‘রাজা’র পরিবার। তিনি বলেছেন, তার পরিবার-পরিজন রাজা হওয়ার শখ পূরণে সমর্থন-সহযোগিতা দেয়য়। তার বক্তব্য, ‘শেষ দিন পর্যন্ত রাজার ভূমিকার দ্বারা মানুষকে আনন্দ দিয়ে যেতে চাই।’
রাজা আবদুল কাদের যদিও প্রকৃত রাজা নন, তার জীবনযাত্রা যাতে নির্বিঘ হয়, তা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নেবে। নানা সমস্যায় ক্লিষ্ট জীবনে তিনি যে মানুষকে বিনোদন জুগিয়ে আসছেন, এর গুরুত্ব কম কিসে? এ জন্য আমৃত্যু তার জীবনযাত্রা হতে হবে নিরাপদ ও বাধাহীন।


আরো সংবাদ



premium cement