২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিরোধী দলের কর্মসূচি পণ্ড

গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ দিন

-

বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে ধারাবাহিক নেতিবাচক খবর প্রকাশ হচ্ছে। গণতন্ত্র নিয়ে পর্যবেক্ষণকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদনে, বছর বছর আমাদের শাসনের মানে অবনতি দেখা যাচ্ছে। ভ্যারাইটিজ ডেমোক্র্যাসির সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য সব হারিয়ে তালিকার সর্ব নিম্নস্তরে অবস্থান করছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দেশের ভেতর থেকে সংস্কার ও সংশোধনের কথা স্পষ্ট করে বলা হবে, তারও পরিবেশ নেই। চার দিকে ভীতি গ্রাস করেছে। এই অবস্থায় একটি রাষ্ট্র্র বহুদূর এগোতে পারবে না। সেজন্য মানুষ প্রত্যাশা করছে, রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর সরকার এবার অন্তত নমনীয় হবে। বিরোধী দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় আর আগের মতো বাধা দেবে না। সম্প্রতি প্রধান বিরোধী দল তাদের নেত্রীর চিকিৎসার দাবিতে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। দেখা গেল প্রথম দফায় বিভিন্ন জেলায় তাদের কর্মসূচি নানাভাবে ভণ্ডুল করে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে সুচিকিৎসার্থে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বুধবার ছয়টি জেলায় সমাবেশ কর্মসূচি ছিল বিএনপির। দলটি কেন্দ্রীয়ভাবে মোট ৩২ জেলায় পর্যায়ক্রমে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে প্রথম দিনের কর্মসূচিতে দেখা গেল, আগের মতো নানা কায়দায় বাধা দেয়া হয়েছে। হবিগঞ্জে পুলিশ সশস্ত্র আক্রমণ করেছে প্রতিবাদী জনতার ওপর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খোঁড়া অজুহাত দিয়ে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। বগুড়া ও যশোরে সব অভ্যন্তরীণ সড়কে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে এ ধরনের কূটকৌশল বর্তমান সরকারের পুরো সময়জুড়ে বহুবার দেখেছে মানুষ। এতে করে সরকার আসলে কী অর্জন করতে চায়, স্পষ্ট নয়। সাময়িকভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীরা ব্যর্থ হয় এর ফলে কিন্তু বৃহত্তর জনমানুষের মনে ক্ষোভ ধূমায়িত হয়। অন্য দিকে, এমন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষ কখনো পছন্দ করে না। এর দ্বারা সবাই এক ধরনের বঞ্চনা অনুভব করে। প্রতারণামূলক এমন কর্মকাণ্ড সরকারের আর চালানো কোনোভাবেই উচিত নয়।
হবিগঞ্জে দেখা গেছে, পুলিশের গতানুগতিক তাণ্ডব। সেখানে তারা বলপ্রয়োগ করে দলটির কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দিয়েছে। খবরে জানা যায়, শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় বিএনপির কার্যালয়ে দলীয় নেতারা সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন। প্রথমে তাদের সমাবেশ স্থলে পৌঁছাতে জায়গায় জায়গায় বাধা দেয়া হয়। এরপর তাদের কার্যালয় ঘিরে বেষ্টনী তৈরি করার একপর্যায়ে পুলিশের সাথে তাদের বাগি¦তণ্ডা হয়। অন্য দিকে, কোর্ট মসজিদ এলাকা থেকে একটি মিছিল সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে সদর থানার সামনে লাঠিপেটার শিকার হয়। পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। মুহুর্মুহু গুলি ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করায় পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়। পুলিশের আক্রমণে গুরুতর আহত তিনজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে। একজনের চোখে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বিএনপি দাবি করেছে, পুলিশের হামলায় তাদের ৩০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে যেভাবে সরকার বিরোধীদের বৈধ রাজনৈতিক অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে এখানে তার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়। শেষ পর্যন্ত হবিগঞ্জে তাদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
বাংলাদেশ সরকার বরাবরই নিজেদের গণতন্ত্রী বলে জোর দাবি করে থাকে। এর সপক্ষে তারা বিভিন্ন সময় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। কার্যত ক্ষমতাসীন সরকার সমঝোতার হলে এ দেশের গণতন্ত্রের গুরুতর ক্ষয়ের প্রতিবেদন পাওয়া যেত না; রাজনৈতিক শক্তিগুলো ক্ষমতাসীনদের সাথে প্রতিযোগী হিসেবে কাজ করতে পারত। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, প্রতিপক্ষকে এই সরকার সরাসরি শত্রু বিবেচনা করে। ফলে অধীনে থাকা পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগে ব্যবহার করছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও তার সদস্যদের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের যে ঘোষণা আসছে এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা মনে করি, ক্ষমতাসীনরা চাইলে এই গুমোট পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে তারা সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া নাগরিকরা এতদিন যতগুলো অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেগুলোও ফিরিয়ে দিতে পারে। হবিগঞ্জের ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অতিরিক্ত উৎসাহ দেখিয়েছে কি না সেটা সরকারকে খতিয়ে দেখা দরকার। বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার কিছু নেই। সবাইকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement