২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দু’দশকেও ইন্দুরকানী উপজেলা সুবিধাবঞ্চিত

‘নামে নামে যমে টানে’?

-

কথায় বলে, ‘নামে নামে যমে টানে’- যেন সে প্রবচনটাই সত্য হয়েছে পিরোজপুর জেলা সদরের অনতিদূরে অবস্থিত ইন্দুরকানী উপজেলার বেলায়। নামটি সুন্দর না হওয়ায় এবং বিদঘুটে বলে ২০০২ সালের ২১ এপ্রিল এর যাত্রা শুরু হয় ‘জিয়ানগর’ নামে। কিন্তু নিছক রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত ১৫ বছর পর ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এর নাম হলো ‘ইন্দুরকানী’। উপজেলার নাম বদলালেও এখানকার জনগণের ভাগ্য বদলায় না। দৈনিক নয়া দিগন্তের একটি সচিত্র প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এখানে দু’একবার অর্থ বরাদ্দ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কাজগুলো কয়েক বছর যাবৎ এমনভাবে ফেলে রাখা হচ্ছে যেন এসব অনিয়ম ও জনদুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। তদুপরি, পথঘাটের দুরবস্থা, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজের অভাব, স্বাস্থ্যসম্মত পানির চরম সঙ্কট প্রভৃতি কারণে ইন্দুরকানীতে দীর্ঘ ১৩ বছরে হাসপাতাল ঠিকভাবে চালু করা যায়নি। ফলে উপজেলাবাসী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। আলোচ্য প্রতিবেদনের সাথে ছাপানো ছবিতে দেখা যায়, ইন্দুরকানীতে ‘সিডর’ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভেসে গেলেও সেতু ১৪ বছর পর আজও মেরামত করা হয়নি। তাই ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে শিশুসহ সবাইকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
আরো জানানো হয়েছে, এ উপজেলায় নিরাপদ পানির কোনো সুবিধা নেই। শতকরা ৮০ ভাগ অগভীর নলকূপই আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত। পাড়েরহাট ছাড়া বাস্তবে কোনো ইউনিয়নেই গভীর নলকূপ স্থাপন করা যায় না। এ কারণে বর্ষায় খাবার পানি সংগ্রহ করা হয় বৃষ্টি থেকে। এটা কোনোমতে চললেও শুকনা মওসুমে পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার পড়ে যায়। উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে নদী-খালের পানি লোনা। বড় পুকুর নেই এখানে। ছোট পুকুরগুলোতে গাছের পাতা পচে পানি পানের অযোগ্য হয়ে যায়। এমনকি, এ পানিতে ধোয়া মোছার কাজও চলে না।
নামমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের পর একযুগ পার হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেয়ায় রোগী ভর্তি কিংবা ইনডোর সেবা চালু করা যায়নি। অথচ চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স, শয্যা প্রভৃতি সব কিছুই আছে এখানে। অতএব, রোগীকে কেবল ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে সন্তুষ্ট হতে হয়। এ হাসপাতালে কাজ করতে না পেরে স্টাফদের অনেকে ডেপুটেশনে পিরোজপুরে কাজ করছেন। তবে বর্তমান উপজেলা কর্মকর্তা স্থানীয় এমপির চিঠি নিয়ে এটা চালু করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, এলাকার রাস্তাঘাটের একেবারে অবর্ণনীয় দশা। পাড়েরহাট-সন্ন্যাসী রাস্তা ছাড়া কোনোটার অবস্থা ভালো নয়, অবশ্য একমাত্র ‘ভালো’ সড়কেরও কয়েক স্থানে ভাঙা। কোনো কোনো রাস্তা গর্তে ভর্তি। তাই প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্রামীণ সড়কের শত শত কিলোমিটার আজও কাঁচা। বর্ষার মৌসুমে কাদাপানি মাড়িয়ে চলতে হয় শিক্ষার্থীসহ মানুষকে। অপর দিকে, বর্ষার দিনে উপজেলা সদরের প্রধান বাজারটিতে ঢোকা কষ্টকর। তখন কেউ এখানে বাজার খরচের জন্য প্রবেশ করলে পোশাকের অবর্ণনীয় অবস্থা সৃষ্টি হয়। এ বাজারে ড্রেনের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ করা হয়নি। পাবলিক টয়লেট নেই। নেই ড্রেনেজ সুবিধাও। বাজারের সর্বত্র কাদাপানি আর ময়লার স্তূপ। ২০০৭ সালের সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি সেতু ১৪ বছরেও পুনর্নির্মিত হয়নি। তাই কোনো কোনো এলাকায় সাঁকো দিয়ে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীসহ তিন হাজার লোককে প্রত্যহ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। উপজেলা সদরে বাজারের পাশের খালের সেতুর কাজও চার বছরে শেষ করা হয়নি। উপজেলার ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ ভবনহীন। এ জন্য স্যাঁতস্যাঁতে ও জরাজীর্ণ পরিবেশে লেখাপড়া করতে হয়। উপজেলাস্তরে খেলার মাঠ বা স্টেডিয়াম নেই। খুব কম প্রাইমারি স্কুলে মাঠ আছে। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ সাধারণত অপরিসর। একজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘উপজেলার নাম বদলের পর চার বছর হলেও উন্নয়ন দৃশ্যমান নয়। এখানে উন্নয়ন হয়েছিল জোট সরকার আমলে।’ বর্তমান চেয়ারম্যানের দাবি, ‘উন্নয়ন হচ্ছে।’
আমরা ইন্দুরকানীর সার্বিক উন্নয়ন ও দুর্ভোগের অবসান চাই।


আরো সংবাদ



premium cement