২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পরিবেশ দূষণে প্লাস্টিক বর্জ্য

জনসচেতনতার বিকল্প নেই

-

সারা দেশই মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণের কবলে। পানি, বায়ু, মাটি, পাহাড়, অরণ্য সবকিছুই দূষণে জর্জরিত। এ দূষণ নিছক প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্টি হয়নি। বেশির ভাগই ঘটেছে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে। এখনো তা অব্যাহত আছে। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য। নানা ধরনের প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সেই ব্যবহৃত সামগ্রী বর্জ্য হিসেবে পরিত্যক্ত হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পরিণামে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণের শিকার যেসব দেশ, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একেবারে সামনের কাতারে।
এক পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে তিন গুণ। আর রাজধানী ঢাকায় প্রতিটি মানুষ বছরে ২৩ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করে। এর প্রায় অর্ধেক মাটি ও পানিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে। অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। জনস্বাস্থ্যকে ফেলে হুমকিতে।
বিশ্ব ব্যাংকের এক রিপোর্টে সম্প্রতি বলা হয়েছে, দেশে বছরে সৃষ্ট মোট বর্জ্যরে ১০ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্যজাত। এর ৪৮ শতাংশ মাটিতে পড়ে, আর ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহার হয়। ১৫ শতাংশ পড়ে নদীতে, খালে ও নালায়। আমরা প্রতিদিন যেসব পণ্য ব্যবহার করি, তার মোড়ক হিসেবে ব্যবহৃত প্লাস্টিকই প্রধানত মাটিতে ও নদী-নালায় পড়ে। যেমন- পানির বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ নানা ধরনের খাদ্যপণ্যের মোড়ক ইত্যাদি।
উন্নত বিশ্বে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী তৈরি করা হয়; কিন্তু আমাদের দেশে তেমন উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। প্লাস্টিক বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ দূষণের নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্ব ব্যাংকের তাগিদ ও সহায়তায় একটি পরিকল্পনা এতদিনে নিতে যাচ্ছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। তবে সেটিও নেয়া হচ্ছে সীমিত আকারে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, পরিকল্পনায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। এতে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এর ফলে প্লাস্টিক পণ্যের রিসাইকেল করার ব্যবস্থা থাকবে।
প্রশ্ন হলো- পরিবেশের জন্য যে জিনিসটি মারাত্মক ক্ষতিকর সেটি কেন আমাদের জনজীবনে ব্যাপকভাবে প্রচলনের সুযোগ দেয়া হলো? অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই তো বিকল্প ছিল। যেমন- শহর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পলিথিন ব্যাগ। দোকানে এবং বাজারে দৈনিক বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যাগ আমরা ব্যবহার করি। এটি খুব সহজেই পাল্টানোর সুযোগ ছিল। এখনো আছে। কাগজের ঠোঙ্গা বা ব্যাগ পলিথিনের উৎকৃষ্ট বিকল্প। বাজারের ব্যাগ হিসেবে পাটের ব্যাগের ব্যবহার হয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। সেই অভ্যাস ফিরিয়ে আনা জরুরি। জনস্বাস্থ্যের প্রয়োজনেই এটি দরকার ছিল; কিন্তু সরকার সে দিকে নজর দেয়নি। একবার বিএনপি সরকারের আমলে পলিথিন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল; কিন্তু পরবর্তী সময়ে গুরুত্ব দিয়ে তার বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ এ নিয়ে মন্ত্রীরা জনগণকেই সাধারণত দোষারোপ করেন। যেমন- প্লাস্টিক নিয়ে এক আলোচনায় পরিবেশমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সচেতন নই। যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলি। আমাদের সচেতন হতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘বিদেশে গেলে আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলি। কিন্তু দেশে এসে কেন যেখানে-সেখানে ফেলি’? প্রশ্নটা আমাদেরও। বিদেশে গেলে বাংলাদেশীরা যখন ঠিক কাজটিই করেন; তখন বোঝা যাচ্ছে- এ দেশের মানুষ আইন ও সংস্কৃতির প্রতি অনুগত। দেশে আইনের প্রয়োগ ও সংস্কৃতির অনুপস্থিতির জন্য দায়ী কারা? সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গরজ নেই কাদের?


আরো সংবাদ



premium cement