২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি দরকার

ছোট ঋণগ্রহীতাদের বড় ভোগান্তি

-

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে লেনদেনকারী গ্রাহকরা প্রায়ই হয়রানির মুখে পড়েন। ঋণ পেতেও তাদের নানা কঠোর শর্তের বেড়াজাল ডিঙ্গাতে হয়। শুধু ক্ষুদ্র উদ্যোগ নয়- ছোট আকারের ব্যক্তিগত ঋণ, ক্রেডিট কার্ড, গাড়ি-বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ঋণ নিয়েও হয়রানির যেন শেষ নেই। অথচ অ্যাকাউন্ট খোলার আগেই অনেক বড় উদ্যোক্তার নামে ঋণ অনুমোদনের অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আর ছোট ঋণের ক্ষেত্রে আবেদন পর্যায়েই বহুবিধ হয়রানিতে পড়তে হয়। কোনোমতে ঋণ পাওয়ার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহকের সাথে ব্যাংকের হিসাবের গরমিল হয়। অনেকসময় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নোটিশ ছাড়াই সুদহার বাড়িয়ে দেয়। সেবার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা বৈষম্য।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে অসংখ্য অভিযোগ পেশ করেছেন। এ বছরে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার অভিযোগ এসেছে, যার বেশির ভাগই করেছেন স্বল্প পরিমাণের ঋণগ্রহীতারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। বাস্তবে ছোট ঋণগ্রহীতাদের অসহায় অবস্থা যেমন ছিল; তেমনই রয়ে গেছে। অবস্থা এমনই যে, সব ধরনের নিয়ম মেনে ঋণ পরিশোধ করেও হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে, করোনার সময় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও ধারদেনা করে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেছেন; কিন্তু তার পরও নানা ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে, সুদসহ পুরো ঋণ শোধ করেও অনেকে নির্দিষ্ট সময়ের পরও বন্ধক হিসেবে দেয়া জমির দলিল ফেরত চেয়েও পাচ্ছেন না। অগত্যা দলিল ফেরত পেতে সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে অভিযোগ করতে হয়েছে। ছোট ঋণগ্রহীতাদের কাছে থেকে যেসব অভিযোগ আসছে তার মধ্যে রয়েছে- বন্ধকী দলিল ফেরত না পাওয়া, হিসাবের চেয়ে সুদ বেশি নেয়া, স্বীকৃতি দিয়েও ঠিকমতো বিল পরিশোধ না করা এবং কার্ড নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি। অবস্থাদৃষ্টে এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, ছোট গ্রাহকদের প্রতি আচরণে ব্যাংকগুলো রীতিমতো স্বেচ্ছাচার করছে।
সাধারণভাবে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের গ্রাহক হয়রানির সুযোগ নেই; কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকসময় ঋণগ্রহীতারা ঝামেলায় পড়ছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড়দের তুলনায় ছোটদের ঋণ নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, বড়দের মধ্যে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির প্রবণতা তীব্র। আর প্রকৃত সমস্যা ছাড়া ছোট ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধ না করার ঘটনা নেই বললেই চলে। এরপরও ছোট উদ্যোক্তাদের বাড়তি চাপে রাখে ব্যাংকগুলো। অথচ বেশির ভাগ বড় উদ্যোক্তা বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন বা ঋণ আদায় না করেও নিজেদের নিয়মিত দেখানোর সুবিধা পাচ্ছেন। ঋণের এক টাকাও ফেরত না দিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নিয়মিত দেখাচ্ছেন; কিন্তু যত নিয়ম সব ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যক্তিগত ঋণগ্রহীতাদের বেলায়। ঋণ নেয়া থেকে শুরু করে পরিশোধ পর্যন্ত নানাভাবে হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
একটি প্রবণতা লক্ষণীয়, ছোট গ্রাহকদের প্রতি ব্যাংকগুলোর আগ্রহ খুব কম। যে কারণে ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি বাড়ছে। এমন অবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন হলেও উত্তরণের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। সঙ্গত কারণেই সমস্যার সমাধানে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর হতে হবে। কোনো ব্যাংক নিয়ম না মানলে নতুন শাখা, পুনঃঅর্থায়নসহ বিভিন্ন সুবিধা বন্ধ রাখতে হবে। একই সাথে ছোট গ্রাহকের ঋণপ্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। একই সাথে ছোট ছোট ঋণগ্রহীতাকে বেআইনিভাবে হয়রানির বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারিতে আনতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, ছোট ঋণগ্রহীতাদের বর্তমান হয়রানির অনেকাংশেই অবসান ঘটবে।


আরো সংবাদ



premium cement