তৃণমূলের ভোট গ্রহণও পেছনে হাঁটছে
- ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
দেশের তৃণমূল রাজনীতির সবচেয়ে উৎসবমুখর নির্বাচন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট গ্রহণ। গ্রামগঞ্জের মানুষ এই ভোটের জন্য রীতিমতো অপেক্ষায় থাকে; কিন্তু এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার সংখ্যা বলে দিচ্ছে, তৃণমূলের ভোটের সে প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৬ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট গ্রহণ হয়। এবার দ্বিতীয় ারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত ছয় ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে পাঁচ ধাপে এক হাজার ৬০০ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ পদের সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। গণমাধ্যমের খবর থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ইউপি নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৭১, দ্বিতীয় ধাপে ৭৭, তৃতীয় ধাপে ১০০, চতুর্থ ধাপে ৪৮ এবং পঞ্চম ধাপে ৫২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ ৩৪৮ জন ভোটের মাঠে না লড়েই চেয়ারম্যান হয়েছেন। ২০১৬ সালেও ইউপিতে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হন ২০৭ জন। আর ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার হিড়িক পড়েছিল। বিনা ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ১১১ জন। ২০১৬ সালে ছয় ধাপে মোট চার হাজার ১০৪টি ইউপিতে ভোট হয়। এর মধ্যে ২০৭টিতে (৫ দশমিক ০৪ শতাংশ) চেয়ারম্যান হয়েছিলেন বিনা ভোটে। তখন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এবার বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ক্ষেত্রে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবার। ছয় ধাপে দেশে প্রায় চার হাজার ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে। ইউপি নির্বাচনের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিনা ভোটে। ষষ্ঠ ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় এখনো শেষ হয়নি। এ ধাপের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী চেয়ারম্যানের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া এখন প্রায় রীতিতে পরিণত হচ্ছে। যারা বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন, তাদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের। এ কথা ঠিক, নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বী না থাকলে একক প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করার ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই; কিন্তু এভাবে বিপুলসংখ্যক জনপ্রতিনিধি বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। মূলত ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দেশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো তখন নির্বাচন বর্জন করায় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টিতেই ভোটের প্রয়োজন হয়নি। পরে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এ ধারা অব্যাহত থাকে। বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর উপহাস করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, ‘কুমিল্লার লাকসাম ও চট্টগ্রামের রাউজান বিশ্বে আদর্শ নির্বাচনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি- নির্বাচনে মানুষ প্রার্থী হচ্ছে না কেন, এটা দেখতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় একাধিক প্রার্থী নেই, তার কারণ বিভিন্নভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠছাড়া করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। আবার সরকারদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরাও অনেক প্রার্থীকে বসিয়ে দিচ্ছেন। অথচ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্থানীয় সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করা হচ্ছে। এর ফল কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, দেশের তৃণমূলের নির্বাচন-প্রক্রিয়াও বেপরোয়াভাবে পেছন দিকে হাঁটছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা