২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
তীব্র শীতে নিম্নবিত্তরা বিপাকে

গরিব মানুষকে বাঁচাতে হবে

-

বাংলাদেশে প্রতি বছরই শীত আসে এবং এতে প্রধানত দুস্থ-গরিবদের বেশি কষ্ট হয়। এবারও যথানিয়মে শীত নেমেছে এবং একাধিকবার শৈত্যপ্রবাহে এর মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের দরুন উত্তরাঞ্চল বিশ্বের বৃহত্তম পর্বত হিমালয় পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী বলে সেখানে শীত বেশি। যেমন, আমাদের দেশের সর্ব উত্তর-পশ্চিম অংশের পঞ্চগড়সহ বৃহত্তর দিনাজপুরে শীতের প্রকোপ দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে অধিক। অতীতের মতো এ বছরও দিনাজপুরসমেত নানা জায়গায় গরিব মানুষ শীতে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নয়া দিগন্তের দিনাজপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর, সেখানে তীব্র শীতে নিম্ন আয়ের লোকজন বেশি বিপাকে। পৌষ মাসের এ দিনে তাদের দুর্গতি উঠেছে চরমে। ‘মাঘের জাড়ে (শীতে) বনের বাঘও মারে’ বলে প্রবচনে উল্লিখিত রয়েছে।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দিনাজপুরে কয়েক দিন ধরে জেঁকে বসেছে শীত। সকালে ঘন কুয়াশার সাথে বইছে হিমেল বাতাস। এ ছাড়া বিকেলেও কনকনে বাতাসের সাথে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। এই শীতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হলেও কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে অনেক দিনমজুর। শীতের কারণে ঠাণ্ডাজ্বরে ভুগছে বয়স্ক ও শিশুরা।’
এতে আরো বলা হয়েছে, পৌষের শুরু থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করলেও গত কয়েক দিন ধরে তা আরো জেঁকে বসেছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। স্থানীয় মেডিক্যাল কলেজ ও সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, মাত্র তিন দিনে এসব হাসপাতালে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে।
জানা গেছে, তীব্র শীতে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়ে গেছে বিপাকে। কাজ না পাওয়ায় তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠীতলায় জনৈক দিনমজুর বলেছেন, ‘কষ্ট করে সকাল বেলায় এসেও কোনো কাজ পাচ্ছি না। তা হলে অন্তত ডালভাত খেয়ে চলা যেত। আমাদের তীব্র শীতে কষ্ট হচ্ছে। এটা দেখার যেন কেউ নেই।’ দিনমজুরদের বক্তব্য হলো, ‘আমাদের কাজ না পেলে ভাগ্যে ভাত জোটে না। দিন কয়েক যাবৎ খুব ঠাণ্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে। তবুও কষ্ট করে, কাজ পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে হয়; কিন্তু আমাদের কাজ মেলে না। শীতের কারণে কাজ দেয়ার লোক পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে দিনমজুরদের কাজ না পেয়ে ফিরে যেতে হয় বাড়িতে। এ অবস্থায় একজন অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ব্যক্তিও জানালেন, ‘বরাবরের মতো শীত বাড়ছে এখানে। কিন্তু ত্রাণ তৎপরতা এখন পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে চলছে যা জোরদার হওয়া জরুরি।’
স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানানো হয়, বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতার পাশাপাশি উত্তরের হিমেল হাওয়া বইছে দিনাজপুরে। ফলে রাতের বেলায় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছাড়াও শীত আরো বেশি নামতে পারে সামনের দিনগুলোতে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গরম কাপড়, খাবার এবং ওষুধপত্রসহ নানা সামগ্রী ছাড়াও ছিন্নমূল ও বিত্তহীন বা নিম্নবিত্ত মানুষজনের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা দরকার। আমাদের আশা, প্রশাসন এ ব্যাপারে আর বিলম্ব করবে না। অন্যথায়, করোনায় কাজ হারানো দরিদ্রদের ভাগ্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ নেমে আসবে। সময় থাকতেই সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement