২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিশ্বে দ্রুত ছড়াচ্ছে ওমিক্রন

দেশে কার্যকর ব্যবস্থা নেই

-

করোনাভাইরাস আবারো বিশ্বে নতুন করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মাত্র এক মাস আগে শনাক্ত নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ৮৯টি দেশে। নতুন করে লকডাউন দিচ্ছে কোনো কোনো দেশ। সেই দম বন্ধ করা আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন ফিরে আসছে। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ। গত দুই বছরে করোনার বিভিন্ন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিলেও আশ্চর্যজনকভাবে সেগুলো শিশুদের সংক্রমিত করেনি; কিন্তু ওমিক্রন ব্যতিক্রম। এটি শিশুদেরও রেহাই দিচ্ছে না। যুক্তরাজ্যে টানা তিন দিন রেকর্ড সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। লন্ডনের মেয়র এটিকে ‘বড় ঘটনা’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। জার্মানি সে দেশে ব্রিটিশদের ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। নেদারল্যান্ডস বড় শহরগুলোতে লকডাউন দিয়েছে। ফ্রান্সে নববর্ষ উদযাপনে কনসার্ট ও আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জনগণকে বড় জমায়েত এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। টিকার সব ডোজ নেয়ার সনদ ছাড়া কেউ রেস্তোরাঁ ও দূরপাল্লার গণপরিবহনে উঠতে পারছে না। কানাডা নাগরিকদের ঘরে থাকতে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরুনোর পরামর্শ দিয়েছে। আয়ারল্যান্ড সরকার শিশুদের নিরাপত্তায় ৫ থেকে ১১ বছরের সবাইকে করোনার টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ওমিক্রন সংক্রমণের হার প্রতি তিন দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে। গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেন। তারা বলছেন, ভাইরাসটি গভীর উদ্বেগের কারণ। সংস্থার হিসাবে প্রতি তিন দিনে ওমিক্রন সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হচ্ছে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেছেন, করোনার ডেল্টা ধরনের চেয়ে ওমিক্রন ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক।
ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে নতুন করে জারি করা সরকারি বিধিনিষেধ মানতে চাইছে না উন্নত বিশ্বের মানুষ। লন্ডনের হাজার হাজার মানুষ নতুন বিধিনিষেধ প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীরা দফায়-দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারা করোনার টিকার বিরুদ্ধে স্লোগানও দেয়। ওমিক্রন দ্রুত ছড়াচ্ছে আমেরিকাতেও। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ৮৫ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু নিউ ইয়র্কেই ২২ হাজার রোগী। সেখানেও টিকাবিরোধী মনোভাব আছে মানুষের মধ্যে। সরকার টিকা নিতে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছে।
এই যখন বিশ্বের অবস্থা তখন বাংলাদেশে এ নিয়ে খুব একটা আন্তরিক প্রয়াস দেখা যাচ্ছে না। প্রতিবেশী ভারত ও নেপালে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। আমাদের দেশেও দু’জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। আফ্রিকা থেকে আসা ২৮ জন নাগরিক দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বেরিয়ে গেছেন। তাদের কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে নেয়া যায়নি। তারা ওমিক্রনে আক্রান্ত ছিলেন কি ছিল না তা জানার আর উপায় নেই। এর আগে ইতালি থেকেও কয়েকজন প্রবাসী দেশে ফিরে জনসাধারণ্যে মিশে যান।
অথচ সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, দেশের সব প্রবেশপথে নাকি সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলা হলেও তা কোথাও দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় কারিগরি কমিটি ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া দেশগুলো থেকে যাত্রী আসা বন্ধের সুপারিশ করেছে। আক্রান্ত দেশ থেকে আসা সবাইকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং কোভিড পজিটিভ হলে আইসোলেশনে রাখতে বলেছে। প্রতিটি প্রবেশপথে স্ক্রিনিংসহ সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন, চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা ও সভা সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করে কমিটি; কিন্তু কোনো সুপারিশই যে বাস্তবে কার্যকর হয়নি সেটি বিভিন্ন ঘটনা থেকে স্পষ্ট।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন আল্লাহ না করুন, ওমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে ভাগ্যের হাতে আত্মসমর্পণ ছাড়া সাধারণের আর কিছু করার থাকবে বলে মনে হয় না।

 


আরো সংবাদ



premium cement