২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিমানবন্দরে ভোগান্তি

কর্তৃপক্ষের পেশাদারিত্ব দরকার

-

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রতি যাত্রীরা বিপুল ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর হওয়ার পরও দীর্ঘ দিনে এর টেকসই পরিচালন ব্যবস্থাপনা আমরা তৈরি করতে পারিনি। বর্তমানে বন্দরের বর্ধিতকরণ ও সংস্কার কাজের পাশাপাশি যাত্রীসাধারণের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় এর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা একেবারে এলোমেলো হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ এসব ভোগান্তির জন্য নানা অজুহাত দেখাতে চাইলেও এটা মেনে নেয়া যায় না। কারণ বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমটিকে সর্বাবস্থায় মসৃণভাবে চালানোর জন্য যে প্রস্তুতি থাকা দরকার সে ক্ষেত্রে গাফিলতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে এবার ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তাতে দেখা গেছে, যাত্রীদের পরীক্ষা করা, প্লেনে মালামাল উঠানো-নামানো এগুলোতে জটলা বেঁধে যাচ্ছে। যাত্রীদের অধিক সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীরা বিমানবন্দর এলাকায় করোনা টেস্টের জন্য যাচ্ছে তবে রক্ত দিয়ে ফলাফলের জন্য কয়েক ঘণ্টা তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে জটলা আরো বাড়ছে। এর ওপর বাড়তি কষ্ট হিসেবে হাজির হচ্ছে ট্রলি-সঙ্কট। যাত্রীরা তাদের মালামাল নিয়ে অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে দুই হাজার ট্রলি রয়েছে। এর বড় একটা অংশ অচল। সচল ট্রলিগুলোও যাত্রীরা পাচ্ছে না। সিন্ডিকেট করে ট্রলি গায়েব করে দেয়ার কথা উঠেছে।
বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে দিনে আট ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করা হয়েছে। বছরের এই সময়টাতে ফ্লাইটের সংখ্যা কমেনি। ফলে একসাথে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এসে নামলে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সামাল দেয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের মালামাল স্ক্যানিংয়ে দীর্ঘ জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বিশেষ কিছু দেশের যাত্রীদের অতিরিক্ত তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। বিমানবন্দরে উদ্ভূত ভোগান্তির জন্য এসব কারণ সামনে এসেছে। বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয়। বিমান সংস্থাগুলো এ অর্থ পরিশোধ করে সময়মতো সেবা পাওয়ার জন্য। অথচ দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকটি ফ্লাইটকে বিমানবন্দরে বিলম্ব করতে হচ্ছে। কমপক্ষে এক ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হচ্ছে এখন।
বর্তমান সময়ে বিমানবন্দরে ভোগান্তির জন্য কর্তৃপক্ষ বিশেষ পরিস্থিতির দোহাই দিচ্ছে। তারা জানাচ্ছে, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে পরিস্থিতি তারা সামাল দিতে পারছে না। এমন অজুহাত কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এত বড় একটি বিমানবন্দর সামলানোর জন্য যে পরিকল্পনার দরকার তার অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ ধরনের বিশেষ পরিস্থিতি হতে পারে, সেটি কর্তৃপক্ষের জানা থাকার কথা। সে হিসেবে তারা আগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা। বিমানবন্দরের সংস্কারের কাজটি বহু আগে থেকে শুরু হয়েছে। এ জন্য দৈনিক আট ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধ করা লাগবে, সেটি জানা কথা। সুতরাং আগেই এর জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা ছিল।
যতটুকু জানা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বৈদেশিক মুদ্রা আহরণকারী শ্রমিকরা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আমরা গর্ব করি। দেশের অর্থনীতিকে সঙ্কটকালেও সচল রেখেছে এই শ্রমিকরা। কিন্তু সবসময় তারা নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার। তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি কখনো খেয়াল রাখা হয় না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সব মিলিয়ে যাত্রীসেবার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়ে রয়েছে, তা আবারো প্রমাণিত হলো। অন্য দিকে কর্তৃপক্ষ যে ব্যর্থ হয়েছে সেটিও স্পষ্ট হয়ে গেছে। একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে চলাচলকারী ২৭টি বিমান সংস্থার সংগঠন এয়ারলাইন্স অপারেটরস কমিটি (এওসি) জানিয়েছে, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে সামাল দেয়া হচ্ছে না।
আমরা মনে করি, দু’ধরনের পরিবর্তন দরকার। একটি হচ্ছে- ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে পেশাদার ও যুগোপযোগী হতে হবে যাতে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি তারা সামাল দিতে পারে। অন্যটি হচ্ছে- মানসিকতায় পরিবর্তন এবং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণকারী শ্রমিকদের যথাযথ মূল্যায়ন। যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলার পরিবর্তে তাদের জন্য সহজ পরিস্থিতি তৈরি করে দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement