২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
লাগামহীন কৃষিপণ্যের বাজার

দিশেহারা ক্রেতাসাধারণ

-

আমাদের দেশে বাজারব্যবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় গ্রাম থেকে শহরে পৌঁছাতে সব ধরনের কৃষিপণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বাড়তি দামেই কিনতে হয় সব পণ্য। কেন দর বাড়ছে কারো কাছে এর জবাব নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সবজির মৌসুম হওয়ায় শীতের সময় বাজারে থরে থরে সাজানো থাকে সবজি। তখন সব ধরনের কৃষিপণ্যের দাম সারা বছরের তুলনায় কম থাকে; কিন্তু এবার শীতেও অন্যান্যবারের চেয়ে সবজির দাম চড়া। লাগামহীন খাদ্যপণ্যের বাজার। ফলে ভরপুর বাজারে পণ্য কিনতে দিশেহারা ক্রেতাসাধারণ। শীতের মৌসুম হিসেবে প্রতি বছর সবজির যে দাম থাকে; এ বছর তার চেয়ে অনেক বেশি দরে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বছরের এ সময় বেশির ভাগ সবজির দর ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় নেমে আসে। এ বছর ৩০ টাকার নিচে নেমেছে- এমন একটি সবজিও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন পেঁয়াজ এলেও দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকার বেশি। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের বাজারগুলোতে পণ্যের দর নিয়ে পেরেশান সাধারণ মানুষ।
সারা বছর বেশি দামে যে কৃষিপণ্যটি ভোক্তাদের কিনতে হয় সেটি টমেটো। সময়বিশেষে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। কিন্তু শীতের মৌসুমে দর ১৫-২০ টাকায় নেমে আসে। অথচ সেই টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। শিম বিক্রি হয় সাধারণত ১০-১৫ টাকা দরে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা কেজি। বরবটি ৫০-৭০ টাকায়, ফুলকপি প্রতিটি ৩০-৪০ টাকা এবং বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সস্তা সবজি হিসেবে যে পণ্যটি ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য, সেটি মুলা। গ্রামের বাজারে অনেক সময় মুলার দাম না পেয়ে কৃষক ফেলে দেয়। ঢাকায় সেই মুলার কেজি এখনো ৪০-৫০ টাকা। শালগমের কেজি ৩০-৪০ টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দর কিছুটা কমলেও বছরের সময় হিসাব করলে প্রতিটি কেজিতে ১০-২০ টাকা, ক্ষেত্রবিশেষে এর চেয়েও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এ দিকে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের সহজ উৎস ব্রয়লার সাদা মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। মাত্র দুই সপ্তাহে বেড়েছে কেজি-প্রতি ১৫ টাকা। ‘সোনালি’ মুরগির কেজি ২৭০-২৮০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ২৫০-২৭০ টাকা।
বাজারে সরবরাহ বাড়ছে; কিন্তু বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দর কমলেও দেশের বাজারে দর বেশি। মানুষেরও যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। উত্তরণের উপায় কী- তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। কর্তৃপক্ষ উন্নয়নের জিডিপিতে খুশি। কিন্তু এর পরিবর্তন হওয়া দরকার। নিত্যপণ্যের বাজার যে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, তা সরকারি কর্তাব্যক্তিদের মাথায় আছে বলে মনে হয় না।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দেশে পণ্যের বাজার কোনো নিয়ম মেনে চলছে না। সম্ভবত কিছু মানুষ ভাবছে- এখনই মুনাফা করার সময়। মূলত তারাই সব ধরনের পণ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন দাম বাড়াতে ইচ্ছে হয়, তখনই তারা দাম বাড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার বলতে গেলে নির্বিকার। আমরা মনে করি, উৎপাদন ও সরবরাহের ত্রুটিপূর্ণ কাঠামোর কারণেই দর কমছে না। একই সাথে কিছু মানুষের মুনাফার লোভে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে সব খাতে। এ জন্য চাই কৃষিপণ্যের বাজার তৈরি করা, যাতে সাধারণ কৃষক সরাসরি তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল কাঠামোতে সমস্যার সমাধান করতে পারলে উন্নতি হতে পারে। এর ফলে কৃষক ও সাধারণ ক্রেতা উপকৃত হবে আশা করা যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement