২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সরকারি দামে সার পাচ্ছেন না কৃষক

কৃষিতে উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা

-

সুলভমূল্যে কৃষকের কাছে সার পৌঁছে দিতে সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি দেয়া হয়। কিন্তু এর সুফল পাচ্ছেন না কৃষক। আমদানিকারক, পরিবহন ঠিকাদার ও ডিলারদের অসাধু চক্র, গুদামের সার আত্মসাতের কারণে সরকার নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত খরচে সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। অতীতে সারের দাবিতে দেশে আন্দোলন হলে কৃষকদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা না গেলে আগামীতে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশের এক প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কিছু দিন আগে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পেরেশান দেশের কৃষককুল। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে সার কেনার সামর্থ্য কত শতাংশ কৃষকের আছে? সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৮ ডিসেম্বর খুচরা বাজারে সর্বশেষ সারের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়। সরকার প্রায় ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে কৃষকপর্যায়ে স্বল্পমূল্যে সার পৌঁছাতে দাম নির্ধারণ করে। সেখানে আগের দাম থেকে পাঁচ ধাপে কমিয়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ১৬ টাকা, টিএসপি ২১ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা ও ডিএপি ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে সার বিক্রি করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন।
আপৎকালীন সময়ে ব্যবহারের জন্য সাত লাখ টন সার মজুদ রাখা হয়। বাকি সার বিদেশ থেকে আমদানি করে সরকার। দেশের আটটি সার কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি ও কাঁচামালের স্বল্পতায় বছরের প্রায় চার থেকে সাত মাসই উৎপাদন বন্ধ থাকে। এতে দেশের সারের মোট চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশই আমদানি করতে হয়। পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানিকৃত সার সরকারের নিয়োগ করা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো হয়। একই সাথে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে সারা দেশে অবস্থিত ১৩টি বাফার গুদামে চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। এসব পরিবহন ব্যবসায়ী সার পরিবহনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ, পরিবহনকালে সার চুরি, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে সার পরিবহন করতে না দেয়া ইত্যাদি কৌশলে সময়মতো ডিলারের কাছে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কটের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা ও জেলাপর্যায়ে নজরদারির অভাবে মাঠপর্যায়ে সার বিতরণ ব্যবস্থায় অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে লাভবান হচ্ছেন। বিভিন্ন সময় সরকারি গুদাম ও কারখানা থেকে সার গায়েবের ঘটনা ঘটছে। ফলে সারের বাজার অস্থির হচ্ছে।
সার পরিবহন ব্যবস্থায় বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োজিত করা না গেলে চক্রের দৌরাত্ম্য ভাঙা সম্ভব নয়। পাশাপাশি সিন্ডেকেট চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সার নিয়ে সঙ্কট নিরসনে প্রতিটি ইউনিয়নের ডিলার পয়েন্টে নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রয় হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে নজরদারি করা দরকার। এছাড়া সরকারি গুদামে সারের মজুদের হিসাব সংরক্ষণ ও এর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবেশী দেশে টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের মূল্য বাংলাদেশ থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় সেখানে সার পাচার হচ্ছে কি না, তারও নজরদারি প্রয়োজন। কারখানা থেকে সরাসরি সার সংগ্রহ করে ডিলারদের নিজ এলাকায় বিক্রির সুযোগ দেয়া হলে তাতে ভালো ফল মিলতে পারে। এসব ব্যবস্থা নিতে পারলে আশা করা যায়, কৃষক পর্যায়ে সরকারি মূল্যে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement