দরকার সার্বজনীন সুরক্ষা কর্মসূচি
- ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আমাদের দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হলেও এখনো আয়বৈষম্য কমেনি। এক দিকে উন্নয়ন হচ্ছে, অন্য দিকে বাড়ছে বৈষম্য। অবৈধ আয় চলে যাচ্ছে বিদেশে। উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এক টাকার কাজে তিন টাকা খরচ হয়। এর দুই টাকা যাচ্ছে সুযোগসন্ধানীদের পকেটে। বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় আয়ের এই অর্থ পাচার হচ্ছে। ফলে দেশে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে; গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। মুুক্তিযুদ্ধ হয়েছে দুর্নীতি এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে। স্বাধীন দেশে এগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এ অবস্থায় দেশে করোনার প্রভাবে দেশের কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। কবে নাগাদ স্বাভাবিক অর্থনৈতিক জীবনে তারা ফিরতে পারবে, বলা মুশকিল। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনার প্রভাবে দেশে নতুন করে আরো আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমায় চলে এসেছে। মহামারীর আগেই দেশের দুুই কোটি ৪২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। দারিদ্র্যসীমায় চলে যাওয়া নতুন সংখ্য যোগ করলে দেশে এখন দারিদ্র্যসীমায় মোট প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের বাস।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈষম্য সর্বক্ষেত্রে প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় বলা হয়েছে, লকডাউনের প্রথম মাসেই ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী তাদের চাকরি হারিয়েছে। করোনার প্রভাবে ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছে। শহরের তুলনায় গ্রামে চরম দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে বেশ। বস্তিবাসীর দৈনিক আয় কমেছে ৮২ শতাংশ। টিকে থাকতে কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের মানুষ বাজার তালিকায় কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে। বাস্তবতা হলো- কোভিডের পর দেশে সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্যহার বেড়ে গেছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আয়দারিদ্র্য। ব্যবসাবাণিজ্য কমে যাওয়ায় এই দারিদ্র্য বেড়েছে। শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে করোনাকালে সরকার বড় উদ্যোক্তাদের যে সহায়তা দিয়েছে, এর কারণে তাদের মূলধন সমস্যা হয়নি। তবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা মূলধন হারিয়েছে। পরিণতিতে তারাও হারিয়ে গেছে। কৃষি খাতে গিয়ে এসব মানুষ আর উদ্যোক্তা থাকতে পারেনি। অন্য দিকে চাকরিজীবীদের ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বেশ খারাপ অবস্থায়। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের মানুষ। সঙ্গত কারণে ভবিষ্যতে সঙ্কট মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ওপর জোর দেয় দরকার।
করোনায় নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে আসা মানুষদের কী কৌশলে দরিদ্র দশা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হবে সে উদ্দেশ্যে কার্যকর কোনো কৌশল নেই। পুঁজির সরবরাহ, মানসম্মত শিক্ষা ও নগদ সহায়তা দেয়া- এ তিনটিই হতে পারে শক্তিশালী হাতিয়ার। তবে এসব জায়গার মধ্যেই দুর্বলতা রয়েছে। নতুন দারিদ্র্য ঠেকাতে এসব মানুষকে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। করোনার কারণে দারিদ্র্যসীমার উপরে থাকা মানুষের সুবিধা বাড়াতে হবে। তা না হলে যেকোনো সময় তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। আর কর-জিডিপি বাড়াতে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে হবে। পরোক্ষ করের মাধ্যমে গরিব মানুষের ওপর চাপ বাড়ালে তাদের জীবনে আরো দুর্ভোগ নেমে আসবে। তাই বৈষম্য কমাতে সুবিচারপূর্ণ বণ্টন কৌশলে যেতে হবে। সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। না হলে এক দেশে দুই অর্থনীতি চালু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, দেশে পুঞ্জীভূত সমস্যা আছে। অর্থনৈতিক বিপন্নতা এখনই চলে যাবে না; দীর্ঘ দিন থাকবে। তাই দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে টিকিয়ে রাখতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে তা অব্যাহত রাখতে হবে। এখন দরকার সার্বজনীন সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করা। তবেই সম্ভব দেশের দরিদ্রদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কোনোমতে ঠিক রাখা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা