২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সরকারি জমিতে শত শত বাড়িঘর

প্রশাসনের খবর কী?

-

রাজধানীর নিকটবর্তী গাজীপুর জেলায় বনের প্রহরীরা বন রক্ষার দায়িত্বে থেকেও উল্টো বনাঞ্চল ধ্বংসের মতো অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। আইনের রক্ষক হয়েও কেউ কেউ বনের ভূমি বেহাত হতে বা ‘ভক্ষণ’ করতে সাহায্য করছে বলে জানা যায়। অভিযোগে প্রকাশ, বন বিট কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে বড় অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে গেজেট করা বনভূমি অবাধে দখলবাজদের কাছে তুলে দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের ভয়াবহ কথা অনেকের মুখেই শোনা যায়। এ দিকে অসাধু বনরক্ষীদের সহায়তায় কেবল স্থানীয় ছাতির বাজার এলাকায়ই মাত্র দুই বছরে বনাঞ্চলের জায়গায় কয়েক শ’ বাড়িঘরসহ নানা অবকাঠামো গজিয়ে উঠেছে। নয়া দিগন্তের গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধির পাঠানো এক প্রতিবেদনে এটা জানা যায়। সাথে যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে- ছাতির বাজারে বন বিভাগের জমি দখল করে বিল্ডিং পর্যন্ত গড়ে উঠছে অবাধে।
এতে উল্লেখ করা হয়, সরকারের কর্মচারী হয়ে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেদখলে সহযোগিতা করছে, তারা এমন অন্যায় করার কথা দম্ভের সাথে বলছে। যেমন, একটি ভিডিও ক্লিপে জনৈক সামান্য বন প্রহরীর ‘অসামান্য’ উক্তিতে দেখা যায়, তিনি জানাচ্ছেন যে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বাসায় মাত্র ১ ঘণ্টায় (গাজীপুরে পোস্টিংয়ের) অর্ডার করিয়েছেন। তার ভাষায় (বনের জমিতে) ‘ঘর দেবো, টাকা খাবো, ঘর ভাঙব। দায়িত্ব নিয়ে বনে বাড়িঘর তৈরিতে সাহায্য করি। একটু বেশি তো খাবোই। আমি যে কী, তা সবাই জানে।’ তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে কর্মরত। অভিযোগে প্রকাশ, একজন বিট কর্মকর্তার মদদে এই ব্যক্তি বেপরোয়া। গেজেটেড বনের বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে দিয়ে তিনি লাখ লাখ টাকা কামাই করছেন বলে জানা যায়। অপর দিকে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদের ঘুরে ফিরে এই জেলায় পদায়ন করে বনাঞ্চল বেহাত কিংবা উজাড় করার সুযোগ করে দেয়া হয়। সাতখামাইর বন বিটের এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২ বছরে ছাতির বাজারের গেজেট করা বনভূমিতে কয়েক শ’ ঘরবাড়িসহ নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠেছে। স্থানীয় বিট কর্মকর্তা ও একজন ফরেস্ট গার্ডের ছত্রছায়ায় এখানে বনের জায়গায় বহু লোক পাকা ঘর তুলেছেন বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান প্রধান বন সংরক্ষক এ দায়িত্ব নেয়ার পরপর কৃষি জমিরূপে ব্যবহৃত বনভূমি জবরদখল থেকে মুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। অথচ সাতখামাইরের মতো কোথাও কোথাও গেজেটভুক্ত বনভূমি ও বনের অসৎ কর্মচারীদের সহায়তা নিয়ে কোথাও ‘ধানী জমি’, কোনো স্থানে ‘সবজিক্ষেত’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জানা যায়, একজন বিট অফিসারের সাথে আঁতাতের মাধ্যমে কিছু অধস্তন কর্মচারী অন্যায়ভাবে তৈরি করা ঘরবাড়ির মালিকদের থেকে বিপুল অর্থ আদায় করেছে। এই ঘুষের সংবাদ উচ্চপর্যায়ে জানাজানি হয়ে গেলে লোক দেখানো উচ্ছেদাভিযান চালানো হয়। অথচ এই অভিযানকালেই ছাতির বাজারে বন জবরদখলবাজ তিনজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বন বিভাগের কয়েক সূত্র জানায়, এ অধিদফতরের জনৈক প্রভাবশালী কর্মচারী নিকটাত্মীয় সাতখামাইরে বনের অভিযুক্ত কর্মকর্তা। তার একজন নিকটাত্মীয় গাজীপুরের বনে কর্মরত। এই চক্রের দাপটে রেঞ্জ কর্মকর্তারা কোণঠাসা। ফলে প্রকাশ্য ‘ঘুষকাণ্ড’ দেখেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারি না। বিট কর্মকর্তা অভিযোগ করলে উপরে জানাতে পারি।’ আর অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘বনের জমিতে ঘর ছিল আগেও। এখনো তা আছে। উচ্ছেদও অব্যাহত। আমাদের ছত্রছায়ায় বনে ঘর বা অবকাঠামো গড়ে ওঠার অভিযোগ পুরো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
প্রশাসন সুশাসন চাইলে এসব চলতে পারে না। প্রশাসন বা সরকার নিজ দায়িত্ব পালন করলে জনগণের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। অন্যথায়, দেশের নাগরিকরা জিজ্ঞাসা করবে, প্রশাসন কোথায়? তারা কি এসব অন্যায় দেখেও দেখে না?

 


আরো সংবাদ



premium cement