২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে

-

দেখতে দেখতে আমাদের বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তির ক্ষণ ঘনিয়ে এসেছে। আর মাত্র এক দিন পর স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তীতে সবার মন ভরে উঠবে ভিন্ন দ্যোতনায়। তবে এই ভালোলাগার সাথে সাথে দেশবাসীর মন বিষাদে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, তাদের কথা স্মরণ করে, যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
দেশের স্বাধীনতা অর্জনে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের অবদান অপরিসীম। স্বাধীনতার জন্য তাদের অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। বছর ঘুরে আজো আবার এসেছে জাতির জন্য সেই বেদনাবিধুর দিন ১৪ ডিসেম্বর, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক আগের মুহূর্তে হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশকে হত্যা করে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ২৫ মার্চের কালরাতেও বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে মর্মান্তিকভাবে জীবন দিয়েছেন। প্রতি বছর এ দিনে জাতি আন্তরিক শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করে। স্মরণ করে দেশের জন্য তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের অমর কাহিনী। বুদ্ধিবৃত্তির নির্মোহ চর্চার মাধ্যমে জাতীয় প্রগতি ও অগ্রগতি অর্জনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা ও কর্মকাণ্ড সামনে রাখতে হবে। তাদের দেখানো পথেই এগিয়ে যেতে হবে আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার পথে।
স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীরা তাদের বুদ্ধি ও মননশীলতার চর্চার মাধ্যমে জাতির শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তাদের মতো খ্যাতনামা লেখক-সাংবাদিক-সাহিত্যিক-চিকিৎসক, শিক্ষক-শিল্পীসহ নানা প্রতিভার অধিকারী, বুদ্ধিজীবীরা জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা আর দূরদর্শিতা দিয়ে সাধ্যমতো ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দৃঢ়তার সাথে সব রকমের সহায়তা দিয়েছিলেন। সে পথে অবশেষে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশ। দেশের এ মেধাবী সন্তানদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা ও দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন ছিল এমন এক বাংলাদেশের সুপ্রতিষ্ঠা, যা হবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা ও বিত্ত-সম্পদের ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে উল্লেখযোগ্য। তাদের আন্তরিক প্রত্যাশা ছিল অশিক্ষা, অপুষ্টি, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও দুর্নীতি থেকে সর্বতোভাবে মুক্ত কল্যাণময় একটি রাষ্ট্র। সেই দেশে সবার মৌলিক সব প্রয়োজন পূরণ করা হবে। তা পূরণ হবে খুব সহজে। সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ ছিল সেসব বুদ্ধিজীবীর বড় আশা। তারা চেয়েছেন ঐক্যবদ্ধ জাতি; এক সুসংহত রাষ্ট্র। কল্যাণময় ও শান্তিপূর্ণ সমাজে সবার মর্যাদা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার পাশাপাশি সন্ত্রাস সহিংসতামুক্ত অনাবিল পরিবেশই ছিল তাদের ঐকান্তিক আকাক্সক্ষা। তাদের কাক্সিক্ষত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমরা কতটা সাফলতা অর্জন করতে পেরেছি নিজেদেরকে সেই প্রশ্ন করার সময় এসেছে। কারণ, একটি স্বাধীন দেশের জন্য অর্ধশতাব্দী খুব কম সময় নয়।
আজ দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সঙ্কট চরমে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর ও স্থবির। জ্ঞান বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার চর্চা অনেকটাই নির্বাসনে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেলেও, জনগণের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নও অনেকটাই প্রশ্নের মুখোমুখি। কারণ উন্নয়নের নামে কিছু মানুষের লালসা চরিতার্থ করতে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থই প্রাধান্য পেয়ে গেছে। ফলে প্রকল্পের আকার আয়তন বাড়ছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত উন্নয়ন জাতির সামনে ধরা দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে হলে জাগিয়ে তুলতে হবে জাতির বিবেক।
এ জন্য চাই পর্যাপ্ত আত্মসমালোচনা, আত্মবিশ্লেষণ। আসুন, বুদ্ধিজীবীসহ সব শহীদের স্বপ্ন পূরণে আমরা সবাই এক হয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই এবং সাংবিধানিক পন্থায় দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্য পালনে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ঠিক আগ মুহূর্তের করণীয় নির্ধারণ করে একযোগে পা মেলাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement