সতর্কতার সাথে এগোতে হবে
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হতে যাচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করবে সরকার। পাইলট প্রকল্প হিসেবে অর্থাৎ পরীক্ষামূলকভাবে প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণীর জন্য এক শ’ স্কুল এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য এক শ’ স্কুলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হচ্ছে নতুন পাঠ্যক্রম। এই দুই শ’ স্কুলের অভিজ্ঞতা থেকে পরে সারা বছরের জন্য নতুন পাঠ্যসূচি চালু করা হবে। এরপর ২০২৩ সালে সব শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে আমূল পরিবর্তন আনা হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রথমে চার মাসের বই দেয়া হবে। এর প্রতিক্রিয়া বা ভালোমন্দ পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের পর ২০২৩ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে।
বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমিয়ে বরং তাদের বাস্তব শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী করে তোলা হবে। এ জন্য নতুন শিক্ষাক্রমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যোগ্যতাভিত্তিক শিখন নিশ্চিত করা, শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া, নম্বরভিত্তিক সনদের পরিবর্তে পারদর্শিতার রেকর্ডের ওপর গুরুত্বারোপ করা, মুখস্থনির্ভর জ্ঞানের পরিবর্তে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা ইত্যাদি। উদ্দেশ্য মহৎ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার, এটিকে যুগোপযোগী করা বা জীবনমুখী করা দরকার এ নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। সমস্যা অন্যত্র। কী পরিবর্তন আনা হবে তা নিয়ে অনেক কথা আছে বা থাকতে পারে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা হলো একটি শিক্ষার্থীর জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়ার চাবিকাঠি। এ সময় একজন কোমলমতি শিক্ষার্থীর মন যেভাবে গড়ে ওঠে পরবর্তী সব জীবনের জন্য সেটিই স্থায়ী হয়ে যায়। বলা যায়, মানুষের পুরো চরিত্রের কাঠামোটি গড়ে ওঠে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে। তাই এ ক্ষেত্রে যেকোনো পরিবর্তন আনতে হলে জাতীয় পর্যায়ে সব শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞকে নিয়ে দেশজুড়ে ও জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা বা সংলাপ অনুষ্ঠানের দরকার ছিল। প্রয়োজন ছিল বিজ্ঞানসম্মতভাবে অভিভাবক তথা জনগণের মতামত সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা। আমরা বলতে চাই, শিক্ষাব্যবস্থায় যেকোনো পরিবর্তন হওয়া উচিত সম্পূর্ণভাবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে। আর বিদ্যমান-ব্যবস্থা পরিবর্তনের আগে তা কিভাবে পাল্টানো হবে বা নতুন ব্যবস্থার রূপরেখা কী হবে সে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করা সরকারের প্রধান কাজ। এ বিষয়ে যা করা হয়েছে তা কি যথেষ্ট?
আমরা দেখছি, অনেক শিক্ষাবিদই নতুন পাঠ্যক্রমের বিষয়ে নানা আপত্তি তুলে ধরেছেন গণমাধ্যমে। সরকার ২০১০ সালে একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। তাতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছিল। এক দশকেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বিষয়টি তুলে ধরে একটি দৈনিককে বলেছিলেন, গত এক দশকে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখিনি, যা প্রমাণ করে যে সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক নয়। প্রাথমিক শিক্ষা সেই পঞ্চম শ্রেণীতেই আটকে আছে। আইনি জটিলতা, অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষকের যোগ্যতা, মর্যাদা ও বেতন স্কেল ঠিক করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষক নিয়োগ, কারিকুলাম তৈরি, পাঠ্যপুস্তক লেখা, গোটা ব্যবস্থা নজরদারি- এসব কোনো বিষয়েই সরকার কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। তার মানে দাঁড়ায়, এ বিষয়ে সরকারের কোনো আন্তরিক অঙ্গীকার নেই, যা আছে তা কেবলই লোকভোলানো কথামালা।
সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি বলে একটি বিষয় চালু করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে বেশির ভাগ শিক্ষক বিষয়টি বুঝতেই পারেন না। এভাবে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করতে গিয়ে যদি একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় তাহলে পুরো ব্যবস্থাটিই লেজেগোবরে হয়ে পড়তে পারে। এখন যে বছরজুড়ে মূল্যায়নের কথা বলা হচ্ছে সেটি করার যথেষ্ট যোগ্যতা ক’জন শিক্ষকের আছে তা নিয়েও সংশয় আছে খোদ বিশেষজ্ঞদেরই। নতুন পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার মানের আরো অবনতি ঘটাতে পারে এমন সতর্কতাও এসেছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিক্ষাবিদদের পর্যালোচনায়। এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতার প্রয়োজন আছে। বিষয়টি ভেবে দেখার মতো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা