২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আবারো পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা

নজরদারিতে উদাসীনতা

-

আবারো বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৩০ টাকা দরে। এবার কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। মজুদ সঙ্কটের কথাও বলছেন তারা। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করার পরও মজুদ সঙ্কট বলে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো খোঁড়া অজুহাত। টিসিবির দৈনিক তালিকায়ও পেঁয়াজের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির তথ্য মতে, এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। দেশী পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেড়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায়। সর্বোচ্চ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা পেঁয়াজ আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪৫ টাকা।
শুধু পেঁয়াজ নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় আরো বেশ কয়েকটি পণ্যের দামও বেড়েছে। টিসিবির পক্ষ থেকে গত সপ্তাহের ১২টি পণ্যের দাম বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ৯টি পণ্যেরই দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে দাম বেড়ে যাওয়া খোলা ময়দা এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ময়দা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪০ টাকা। পুরোনো আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আগের সপ্তাহে ছিল ২০ টাকা। দেশী ও আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে। বাজারে বেড়েছে আদা, এলাচিসহ ব্রয়লার মুরগির দামও। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ১৫০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়ে এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। অন্য দিকে, শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও কিছু সবজির দাম এখনো বেশ চড়া। গত কয়েক মাস ধরেই চড়া সবজির বাজার। শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম কমছে না। এখনো বেশির ভাগ সবজি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার উপরে। কথা হলো- শীতের মৌসুমেও বাজারে দাম চড়া হলে কোন সময় সবজির মূল্য কমবে?
তিন বছর ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি ওঠানামা করছে। চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ উৎপাদন না হওয়ায় আমদানির ওপর নির্ভরশীল আমাদের বাজার; বিশেষ করে ভারতের ওপর। লক্ষণীয়, ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ১০ টাকা বাড়লে বাংলাদেশের বাজারে বৃদ্ধি পায় ৩০ টাকা। বন্যা কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে তা হয়ে থাকে সাধারণত জুন-জুলাই মাসে। কোনো সময় ডিসেম্বরে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। এবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে, দেশে শীতকালে পেঁয়াজের দাম বাড়তে। অথচ এই সময় আগাম অর্থাৎ মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এখন পেঁয়াজের মজুদ সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। সাধারণভাবে প্রশ্ন হলো- কী কারণে শীতের মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়ল? এর কোনো সদুত্তর নেই; না সরকার, না ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে।
আমাদের দেশে অতি লাভের জন্য বেশির ভাগ ব্যবসায়ী নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা করেন না। শুধু নিজেদের মুনাফাই মুখ্য। আসলে ব্যবসায়ীরা সব নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ভোক্তা অর্থাৎ গণমানুষের পকেট কাটতেই সিদ্ধহস্ত। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো- ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার মানসিকতায় লাগাম টানতে সরকারের তরফ থেকে কর্যকর উদ্যোগ নেই। এ কথা বলা অযৌক্তিক নয় যে, মূলত সরকারের বেশির ভাগ নীতিই ব্যবসায়ীদের অনুকূলে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ থাকছেন উপেক্ষিত। এর অন্যতম কারণ, দেশে সুশাসনের অভাব। তা না হলে অবশ্যই সরকারি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি দ্বারা জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেন। আসলে তাদের উদাসীনতাতেই পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা।


আরো সংবাদ



premium cement