২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভেজাল খাবারে শিশুরা ঝুঁকিতে

ওদের নিরাপদ করতে হবে

-

ভেজাল, বাসি ও মানহীন খাবারে ক্রমবর্ধমান হারে দেশের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এদের বিরাট অংশই শিশু-কিশোর, যারা দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ এবং রাষ্ট্রের আগামী দিনের নাগরিক। কিন্তু ওদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা যায় না।
নয়া দিগন্তের এক খবরে এ কথা বলা হয়েছে। সারা দেশের নমুনাস্বরূপ নওগাঁর বদলগাছির চিত্র এতে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, সেখানে বিভিন্ন স্কুলের সামনে এবং বাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই নিম্নমানের যাবতীয় খাদ্য উপকরণ বিক্রি করা হচ্ছে। তা খেয়ে শিশুসহ নানান বয়সের মানুষ ভুগছেন পেটের সমস্যায়। এতে বোঝা যায়, অবাধে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে দীর্ঘ দিন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খোদ বদলগাছি উপজেলা সদরেই মডেল প্রাইমারি স্কুল, কেজি স্কুল এবং হাটবাজারে খোলা আকাশের তলায় মানহীন পরিবেশ সত্ত্বেও বিক্রি করা হচ্ছে নিম্নমানের বাজে খাবার। এগুলো খাওয়া অনুচিত হলেও কচি শিক্ষার্থীরা এসব না বুঝে প্রলুব্ধ হয়ে পড়ছে। অথচ ধুলাবালু মেশানো খাবারগুলো গ্রহণ করে তারা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগজীবাণুর মাধ্যমে।
স্থানীয় সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে প্রায় সময় তার পেট ব্যথার কথা জানাত। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি তাকে পরীক্ষা করে জানালেন, নিম্নমানের ও পোড়া তেলে তৈরি করা খাবার খেয়ে তার পেটে ব্যথা হতে পারে।’
অভিভাবকদের আরেকজন জানান, ‘শিশু-কিশোররা স্কুলে গিয়ে এ ধরনের খাবার খায়। ফলে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে এসে স্বাভাবিক খাদ্য মুখে তুলতে চায় না।’ স্থানীয় মডেল স্কুলের একজন শিক্ষক এ বিষয়ে বলেছেন, ‘স্কুলে শিশুদের মানা করা হয় ফুটপাথের খাবার খেতে। কিন্তু চানাচুর, বিস্কুট, চকলেট, আইসক্রিম, আচার, জলপাই, মুড়িমাখাসহ নানা প্রকার লোভনীয় খাবার চোখে পড়ায় ছেলেমেয়েরা নিজেদের আর সংবরণ করতে পারে না। স্কুলের সামনে থেকে কিছু হকার বিতাড়িত হয়েছে। তবুও সমস্যাটি রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে শুধু আমাদের নয়; অভিভাবকদেরও দায় রয়েছে। তারা তাদের পোষ্যরা স্কুলে আসার সময় কেন ওদের হাতে টাকা দেবেন? এ জন্য তারা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।’ অপর দিকে, হকারদের বক্তব্য হলো, ‘এসব খাদ্য বিক্রি করে আমরা আয় করি এবং সংসার চালাই। নিজেরাই বাড়িতে তা তৈরি করে থাকি।’
বদলগাছি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন, এমন খাবার খেলে পেটের ব্যাধিসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সচেতন নাগরিকদের কথা হচ্ছে, প্রশাসনের কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করা দরকার খাদ্যবিক্রেতা হকারের উৎপাত কমানোর জন্য।
আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে’। কবির এ কথার মানে হলো, আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতের দেশবাসী ও জাতির কর্ণধার। তারাই জনগণকে নেতৃত্বে দেবে। তাই তাদের বর্তমানকে নিরাপদ করা দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থেই জরুরি। শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি না কমিয়ে জাতির ক্ষেত্রে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নিশ্চিত করা অসম্ভব।
এ সব কিছুর বিবেচনায়, আমাদের দেশে সর্বপ্রথম শিশুদের জন্য নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত, ভেজালমুক্ত ও মানসম্পন্ন খাবার বা খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায়, এর মাশুল দিতে হবে গোটা দেশকেই।


আরো সংবাদ



premium cement