২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আবরার হত্যা মামলার রায়

শিক্ষাঙ্গনে পরিবেশ ফেরানোও জরুরি

-

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারের পর দণ্ড কার্যকর হবে এমন প্রত্যাশা করছেন আবরারের স্বজনসহ দেশবাসী। এই রায়ের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যারা এ ধরনের জঘন্য হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা কি নেয়া যাবে? আমাদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হলো সেটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। আগে শোনা যেত, ছাত্রদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা। ’৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের ছাত্রহত্যার ঘটনা মনে পড়লে এখনও অনেকের শরীর শিউরে ওঠে। সেই ধারাবাহিকতায়ই এখনও ছাত্ররা পৈশাচিক কায়দায় নিজের সহপাঠী, বন্ধুদের হত্যা করছে। সর্বশেষ কুয়েটে একটি ছাত্রসংগঠনের অনৈতিক চাপ ও লাঞ্ছনা সইতে না পেরে এক অধ্যাপক মারা গেলেন।
আবরার হত্যার ঘটনায় আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে দেশপ্রেমকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করব সেই প্রশ্ন। ছাত্ররা একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য পৈশাচিক কায়দায় আবরারকে হত্যা করে। সেখানে তিনি মূলত বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু কথা বলেছিলেন। ওই সময় আন্তর্জাতিক নদীর পানির হিস্যা প্রাপ্তি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহার করতে দেয়া ও প্রতিবেশী দেশে গ্যাস দেয়া নিয়ে নিজের দেশের পক্ষে বলেছিলেন। একজন শিক্ষার্থী অথবা যেকোনো নাগরিক নিজ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলবে, দেশের স্বার্থের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, এসব বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে খুব একটা আলোচনা নেই। অথচ প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্প্রীতির সাথে বসবাসের জন্য এটা জরুরি। দেশের পক্ষে অবস্থান নিলে কেন সহযোগী বন্ধুরা তাকে শত্রুজ্ঞান করে এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ও ধাঁধা।
আরো একটি বিষয় গুরুত্বের সাথে আলোচনা ও সুরাহা হওয়া দরকার। আবরারকে হত্যা করার পর তাকে শিবির বলে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়। তবে অপরাধীরা এর প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এই অভিযোগ আরোপ করে নিজেদের অপরাধকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা তারা করেছে। প্রশ্ন হলো, কেউ শিবির করলেই কি তাকে হত্যা করা বৈধ?
আবরার হত্যার রায় হওয়ায় অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু একটি ছাত্রসংগঠনের দানবীয় কর্মকাণ্ড শিক্ষাঙ্গনগুলোতে পুরোদমে চলছে। অর্থাৎ আবরার হত্যার মতো ঘটনা যেকোনো সময় আবারো ঘটতে পারে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিএম কলেজে সম্প্রতি তারা বড় বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ব্যবস্থা বলতে সাময়িক বহিষ্কার ও দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া ছাড়া অন্য কিছু দেখা যায় না। শিক্ষাঙ্গনে পাড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক পর্যায়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। তেমন কোনো উদ্যোগ রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেখা যায় না। ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখনই জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement