২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সময়ের আগেই ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ

স্কুল হচ্ছে শিক্ষার ভিত্তি

-

দীর্ঘ দিন ধরে আমরা ‘সবার জন্য শিক্ষা’র কথা শুনে আসছি; যদিও এর কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয় না। শিক্ষা দূরের কথা, আমাদের দেশের সাক্ষরতার হার নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। এ দিকে দেশের কোনো কোনো এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল বা শিক্ষালয় ভবিষ্যৎ নাগরিকদের শিক্ষাগ্রহণের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ময়মনসিংহের গুরুত্বপূর্ণ গৌরীপুর এলাকার কথা বলা হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকের পাতায়। এর গৌরীপুর সংবাদদাতা প্রসঙ্গক্রমে জানিয়েছেন, অসময়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় কেবল এই উপজেলায়ই ৩৮টি স্কুল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে সাম্প্রতিককালে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে প্রথমেই জানানো হয়েছে, এক দিকে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ, অন্য দিকে চলছে অনুপযুক্ত শিক্ষা ভবনগুলোকে ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা। অল্প দিনেই কোটি টাকার নির্মিত ভবন পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে গৌরীপুরে। অচল ৩৮টি ভবনসমেত ঝুঁকিবহুল প্রায় অর্ধশত ভবন স্থানীয় শিক্ষা কার্যক্রমে এক রকম ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে উঠেছে।
গৌরীপুর উপজেলাতে রামগোপালপুর কান্দুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারের প্রকৌশল বিভাগ ১৯৯৫ সালে একটি ভবন তৈরি করেছিল। মাত্র ৫ বছর না যেতেই ভবনটি কাজে লাগানো অসম্ভব হয়ে যায়। উপজেলার প্রকৌশল ও শিক্ষা, এই দুই বিভাগের তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। তারা ভবনটিকে পরিত্যক্ত বলেও ঘোষণা দিয়েছিল। তাদের দায়মুক্তি সত্ত্বেও এ কাজে সরকারি অর্থ গচ্চা যায় অনেক। বছরের পর বছর ধরে ছাত্রছাত্রীরা তাই খোলা আসমানের নিচে শিক্ষা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে। জানা গেছে, ভবনটির নির্মাণই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কারণ এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। তদুপরি, নির্মাণের পর যথেষ্ট পানি না দেয়ায় পিলার ও বিমে ফাটল ধরে যায়। কোথাওবা বিম ও ছাদ থেকে প্লাস্টার ধসে পড়ছে। সঠিক তদারকি করা হলে এমনটা হতো না। এটা দেখা যায়, বিশেতত বাহাদুরপুর ফিরোজা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এর প্রধান শিক্ষক জানান, পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবনটিতে ক্লাস করার কোনো উপায়ই নেই। তবু শিক্ষকরা এখানেই ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। মাত্র ২২ বছর আগে তৈরি করা হলেও পুরো স্কুল ভবনে ছাদ থেকে পলেস্তারা বা প্লাস্টার খসে পড়ছে। ধীতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন মাত্র কয়েক বছরেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এ ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল অর্ধকোটি টাকা। এরপর ২০০৮ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করতে হয়। প্রধান শিক্ষক জানান, একবার এর ছাদ ও মেঝে মেরামত করতে হয়েছে। এখন দোতলাও কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মুকুল নিকেতন পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ছয় বছর আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। এখন টিনশেডে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। শিক্ষা অফিস জানায়, প্রাণের ঝুঁকি থাকায় এই উপজেলার ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নিলামে বিক্রি করার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। উপজেলা প্রকৌশলীর মতে, ‘নানা’ কারণে ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা দিতে হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি।
‘গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ’ মনে করছে, ‘যত বড় প্রকল্প তত বেশি দুর্নীতি। সাথে যোগ হয়েছে অনিয়ম। এ দুই কারণেই সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও জনগণ প্রত্যাশিত সেবা পায় না।’ একজন ঠিকাদার জানান, ভালোমন্দ নির্বিশেষে প্রকৌশল বিভাগে টাকা না দিলে ঠিকাদারের ফাইল ছাড়া হয় না। তাই ঠিকাদারও বাধ্য হয়ে ফাঁকি দেয়। এ দিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্য, প্রকৌশল বিভাগ ভবন নির্মাণ করে থাকে। তারা আমাদের ভবন বুঝিয়ে দেয়। তবে নির্মাণকাজের মানের নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। কারণ এর তদারকিতে আমাদের কোনো হাত নেই। আর উপজেলা চেয়ারম্যান (উপজেলার শিক্ষাসংক্রান্ত কমিটি প্রধান) বলেন, ‘ভবন অসময়ে পরিত্যক্ত হয়ে গেলে সরকার ও সে বিদ্যালয়ের ক্ষতি হয়। তাই নির্মাণকাজের যথাযথ তদারকি চাই।’
আজকের শিশু-কিশোররা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের উপযুক্ত শিক্ষা পাওয়া জরুরি। আর স্কুল-জীবনই হলো এর ভিত্তি। স্কুল ভবন নির্মাণ যথার্থ না হলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement