২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গো-মড়কে কৃষক দিশাহারা

দেশের কৃষিকে বাঁচান

-

নয়া দিগন্তের গত শুক্রবার সংখ্যায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সংবাদদাতার পাঠানো এক সচিত্র সংবাদে বলা হয়েছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে অজ্ঞাত রোগে দুই গ্রামের ২০টি গরু মারা গেছে। এলাকার অন্য গরুগুলোও মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কৃষকরা জানান, হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনি শুরু হয়ে গরু মরে যাচ্ছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
আলোচ্য প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর এবং বেতদীঘি ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে গরুগুলো মারা গেছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, বিষক্রিয়ায় এসব গরুর মৃত্যু হতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাসুদেবপুর পাকড়ডাঙ্গায় সড়কের পাশে আবাদি জমিতে ব্যাটারি কারখানা স্থাপিত হয়েছে। কারখানাটির বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় দূষণ ঘটছে এবং দূষিত এই ঘাস-খড় খেয়ে গরুর শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হচ্ছে এবং পেট ফেঁপে কাঁপুনি আরম্ভ হচ্ছে। তারপর দু’এক দিনেই এসব গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, এ ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে কারখানাটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাসুদেবপুর গ্রামের মুকুল বলেছেন, বৃহস্পতিবার তার গাভী ও বাছুর প্রাণ হারিয়েছে। ৩০ নভেম্বর মারা যায় তিনটি গরু। এরও আগে ২৭ নভেম্বর একই গ্রামের বাদশা মিয়ার দু’টি এবং সোহেল ও হাফিজের একটি করে গরুসহ সে গ্রামে মাত্র এক সপ্তাহে ১০টি গরুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। মহেশপুরের লোকজন বলেন, সে গ্রামে জাকির, শফিক ও বেলালের একটি করে এবং মুক্তার ও মুজিবের দু’টি করে গরুসহ ১০টি গরু মারা গেছে। এ দু’গ্রামে এভাবে ২০টি গরু মরে গেছে হঠাৎ। একের পর এক গরুর মৃত্যুতে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে গেছেন।
ক্ষতির শিকার ব্যক্তিরা জানান, মাঠে একটি ব্যাটারি কারখানা প্রতিষ্ঠার পর সে মাঠের গুরুগুলোর মধ্যে অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। পশুচিকিৎসকদের অনেকের আশঙ্কা, ব্যাটারির সিসার বিষক্রিয়ার দরুন গরুগুলো মারা যেতে পারে। এলাকায় বহু গরু এখনো একই কারণে অসুস্থ। তবে কেউ গরু বেচে দিচ্ছেন; কেউবা গরু জবাই করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন।
কারখানাটির জমিমালিক বলেছেন, ‘জমিটি কারখানার জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছিল। বেশ কয়েক দিন আগে মানুষের অভিযোগে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর গরু মারা গেছে অল্প কয়েকটি। এ কারখানার কারণে বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। নানা রোগব্যাধির ফলেও পশুগুলো মারা যেতে পারে। আমি নিজেই এ ব্যাপারে দেখব।’
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে- সেখানে একটি ব্যাটারি কারখানা আছে যার বর্জ্য ফেলা হয়েছে পাশেই। প্রাথমিক ধারণা হচ্ছে, সেখানে যে গরুগুলো ঘাস বা খড় খেয়েছে বিষক্রিয়ার দরুন সেগুলোর মৃত্যু হতে পারে। জয়পুরহাট থেকে বিশেষ টিম এসে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা করে দেখবে।’ আর ইউএনও বলেছেন, ‘আমি শুনেছি এ বিষয়ে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে। অবিলম্বে আমাদের তদন্ত টিম গিয়ে দেখবে। এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তবে ইতোমধ্যে আরো গরু মারা যেতে পারে বলে এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত।
আমাদের বাংলাদেশ এখনো মূলত কৃষিনির্ভর যা গরু ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। কারণ এ চতুষ্পদ প্রাণীটি দিয়েই এ দেশে চাষাবাদ করা হয়। তাই ফুলবাড়ীসহ দেশের সর্বত্র গোসম্পদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায়, এ দেশে কৃষিকাজ করা সম্ভব হবে না। আর কৃষি ছাড়া দেশের মানুষ বাঁচবে কিভাবে?


আরো সংবাদ



premium cement