সব ধরনের গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি
- নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নেই
- ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম বাড়ানো হলে ডিজেলচালিত গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ালে স্বাভাবিকভাবেই তা মেনে নেয়া যায়; কিন্তু ডিজেলচালিত নয় এমন ধরনের পরিবহনে ভাড়া বাড়বে কোন যুক্তিতে? বাস্তবে সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে অনেকেই যা কিছু করে জবাবদিহির বাইরে থাকতে পারেন। সম্প্রতি অযৌক্তিকভাবে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। এ সিদ্ধান্তে গণমানুষের কোনো সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা হয়নি। দেখা যাচ্ছে, ডিজেলের দাম বাড়ানোর সুযোগে ডিজেল ও গ্যাসচালিতসহ সব ধরনের গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অথচ সরকার এ ব্যাপারে নির্বিকার। এর পেছনের কারণ হলো- গণপরিবহন মালিকদের প্রায় সবাই সরকার সমর্থক। এ জন্য সরকারি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিষয়টি যেন দেখেও না দেখার ভাণ করছে; গোষ্ঠীস্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য বাড়ানোয় সারা দেশের প্রায় শতভাগ গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ডিজেল ছাড়া শুধু গ্যাসচালিত পরিবহনই নয়, অকটেন ও পেট্রলচালিত যানবাহনেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে পুনর্নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও আদায় করা হচ্ছে বেশি। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা মহানগরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী গণপরিবহনের ৯৫ শতাংশই গ্যাসচালিত। অন্য দিকে দূরপাল্লার বা ঢাকার বাইরে চলাচলকারী গণপরিবহনের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশও গ্যাসচালিত। এ তথ্য খোদ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা যায়।
জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্নির্ধারণের পর পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধিজনিত সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাসংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে মোট বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৭৮ হাজার। এর মধ্যে গ্যাসচালিত পরিবহনের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৮০০ (৬০ শতাংশ) ও ডিজেলচালিত পরিবহনের সংখ্যা ৩১ হাজার ২০০ (৪০ শতাংশ)। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ১৬ হাজার। এর মধ্যে গ্যাসচালিত পরিবহনের সংখ্যা ১১ হাজার ২০০ (৭০ শতাংশ) ও ডিজেলচালিত পরিবহনের সংখ্যা চার হাজার ৮০০ (৩০ শতাংশ)। ঢাকার অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২৬টি। এর মধ্যে গ্যাসচালিত পরিবহন ১১ হাজার ৯০০টি অর্থাৎ ৯৫ শতাংশ। ডিজেলচালিত পরিবহন ৬২৬টি, মানে ৫ শতাংশ।
পরবর্তী সময়ে ডিজেলচালিত অনেক বাস ও মিনিবাস সিএনজি ও এলপিজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। সেগুলোতে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ও গ্যাস উভয়ই ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর সুযোগে ঢাকার অভ্যন্তরে বেশির ভাগ গ্যাসচালিত বাস ও মিনিবাস ডিজেলচালিত দাবি করে বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভাড়া বাড়ানোর নতুন তালিকা প্রতিটি বাস ও মিনিবাসে প্রকাশ্য স্থানে টানানো বাধ্যতামূলক হলেও মানা হচ্ছে না। ভাড়ার তালিকা ছোট অক্ষরে লিখে গাড়ির এমন জায়গায় সাঁটানো হয় যা সচরাচর যাত্রীদের দৃষ্টিগোচর হয় না।
ঢাকা মহানগর ও ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় প্রকৃত ভাড়া এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা বলা হয়, ঢাকার বেশির ভাগ বাস ও মিনিবাস মালিক গাড়িচালক-সহযোগীদের কাছে দৈনিক নির্ধারিত জমা ভিত্তিতে বাস ভাড়া দেন। মালিকদের দৈনিক জমার টাকা; রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে প্রদত্ত চাঁদা ও চালক-কন্ডাক্টর-হেলপারদের নিজেদের দৈনিক আয় তুলতে গিয়েই মূলত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা। অন্য দিকে মালিক সমিতি ও সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়মিত মাসোহারা দেয়ায় পরিবহন মালিকদেরও আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয়। পরিবহন খাতের এ দুরবস্থা শুধু ঢাকা মহানগরীতেই নয়, দেশের প্রায় সব মহানগর ও জেলায় বিদ্যমান।
গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধিজনিত সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর সাথে সহমত পোষণ করে আমরাও মনে করি, ডিজেল ও গ্যাসচালিত পরিবহন শনাক্ত করে স্টিকার সেঁটে দিতে হবে বিআরটিএকে। ভাড়ার তালিকা বড় ও স্পষ্ট অক্ষরে লিখে পরিবহনে প্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নজরদারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা; ডিজেলচালিত হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা যেসব বাস-মিনিবাস সিএনজি বা এলএনজিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে; সেগুলো অনুমোদনহীনভাবে ফের ডিজেলে চালানো হচ্ছে কি না তা নজরদারি করতে হবে। পরিবহন মালিকদের দৈনিক জমা হিসাবে টাকা দেয়ার প্রথা বাতিল করে মালিককে চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপারদের দৈনিক পারিশ্রমিক দেয়া বা আয়-ব্যয়ের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গণপরিবহন চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ সব বিষয় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে যে নৈরাজ্য রয়েছে তা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা