২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা

গাফিলতি নয় নিরাপত্তা জোরদার করুন

-

আমাদের দেশে রেলে বড় বড় বিনিয়োগ হচ্ছে। বাস্তবে রেললাইন দৈর্ঘ্যে প্রবৃদ্ধি ঘটছে না। উন্নতি ঘটছে না রেলপথের মানের। উন্নতমানের রেলবগি ও কোচও খুব একটা সংযোজিত হচ্ছে না। সব মিলিয়ে রেলে সেবার মান বাড়েনি। অথচ বিশ্বের দেশে দেশে রেলপথ জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম। বিশ্বব্যাপী তাই রেল যোগাযোগের সম্প্রসারণ হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে রেল হয়ে আছে বোঝা। এ দেশে রেলের লেভেলক্রসিংগুলোতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। শনিবার চট্টগ্রামের জাকির হোসেন সড়কের ঝাউতলা রেলগেটে এমনই দুর্ঘটনায় তিনজন প্রাণ হারান। সারা দেশে রেলপথের উপর দিয়ে সড়কপথ ক্রস করেছে। এর মধ্যে অনেক ক্রসিং রয়েছে যেগুলো ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে গেছে। এসব ক্রসিং পথচারী ও যানবাহনের দুর্ঘটনা ঘটার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবু ক্রসিংগুলো নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
একটি দৈনিকে খবরে রেলের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, গত ছয় বছরে রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৫ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন লেভেলক্রসিংয়ে। গত বছর রেল দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ৩৪ জনরে ৩৩ জনরেই মৃত্যু হয়েছে লেভেলক্রসিংয়ে। সারা দেশে মোট লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা দুই হাজার ৫৬১টি। রেললাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। যেনতেনভাবে এর যেকোনো পয়েন্ট দিয়ে পারাপার হওয়া যায় না। জানা যায়, অর্ধেকের বেশি- এক হাজার ৩২১টি ক্রসিংয়ের অনুমোদন নেই। এগুলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়কে। সব মিলিয়ে দেশের ৮২ শতাংশ লেভেলক্রসিং অরক্ষিত।
সরকারের পাঁচটি সংস্থা রেললাইনের উপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করে। সরকারি এসব কর্র্তৃপক্ষ যখন ক্রস রোড তৈরি করে সেটি রেলের সাথে সমন্বয় করার কথা। এ ব্যাপারে ব্রিটিশ আমলে আইনও রয়েছে। এ আইন অমান্য করলে দুই বছরের শাস্তির বিধানও রয়েছে। বাস্তবে অনেক ক্রসিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ রেল চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এ জন্য কারো শাস্তি হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত নেই। লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ দায় স্বীকার করে না। ফলে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের পরিবারের কারো কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- রেলগাড়ি অতিক্রম করার সময় ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ পথচারী ও যানবাহনকে এ সময় নিরাপদ দূরত্বে রাখার ব্যবস্থা করা। উন্নত দেশগুলোতে এ ব্যবস্থা প্রযুক্তিভিত্তিক। রেল নিরাপদ দূরত্বে থাকতেই গতিরোধক দিয়ে পথ আগলে দেয়া হয়। ফলে রেল অতিক্রম করে যাওয়ার আগে কেউ চলন্ত রেলের সংস্পর্শে এসে দুর্ঘটনায় পড়ার ঝুঁকি থাকে না। আমাদের দেশে রেললাইন অতিক্রম করেছে হাটবাজার, ঘটবসতিপূর্ণ জনপদ। যেখানে-সেখানে মানুষ রেলপথ পার হয়। উন্নত দেশের মতো নিরাপদ লেভেলক্রসিং তৈরি করা আমাদের জন্য এখনো সম্ভব না হলেও সাধ্যের মধ্যে এটিকে নিরাপদ করার দায়িত্বও আমরা পালন করছি না। বিশেষ করে রেলের সাথে সরকারি অন্যান্য কর্তৃপক্ষ সমন্বয় করে ব্যস্ত ক্রসিংগুলো প্রথম একটা নিয়মের মধ্যে আনতে পারে। সেটি হচ্ছে না।
শনিবার চট্টগ্রামের ঝাউতলায় রেল দুর্ঘটনা থেকে জানা যায়, লেভেলক্রসিংয়ে নিযুক্ত ব্যক্তি সময়মতো দায়িত্ব পালন করেননি। রেল আসার পরও গেটটি ফেলেননি। ফলে যানবাহন চলন্ত ট্রেনের কাছাকাছি এসে গিয়েছিল। বাস্তবে বহু ক্রসিং রয়েছে যেখানে কোনো গেটম্যানই থাকে না। সব মিলিয়ে কর্তৃপক্ষীয় গাফিলতি প্রধান হয়ে উঠছে। অথচ রেলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে, এই বিপুল অর্থ আসলে কী কাজে আসছে মানুষের। একটি ক্রসিংয়ে উড়াল সড়ক নির্মাণ করা, বর্তমানে রেলে চলা বিপুল বিনিয়োগের তুলনায় খুব সামান্য। একইভাবে প্রত্যেকটি ক্রসিংয়ে মানসম্মত পথরোধক নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা করা কঠিন কাজ নয়। এ ধরনের দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুপারিশ করে। তবে দুর্ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। দেখা যায়, লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা হলে কোনো গেটম্যান সাময়িক বরখাস্ত হচ্ছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। আমরা মনে করি, এ ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। রেল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে দেশের সব লেভেলক্রসিং নিরাপদ করতে সমন্বিত ব্যবস্থা নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement