দেশীয় চিকিৎসায় আস্থাহীনতা!
- ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সাধারণ একটি প্রবণতা বাংলাদেশীদের মধ্যে বেড়েছে। বিশেষ করে ভারতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ, বিদেশে পর্যটক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি- সাড়ে ২৯ শতাংশ চিকিৎসা বাবদ ব্যয় করে থাকেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের বাইরে এ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট-২০২০’ নামে ওই জরিপের ফল ২৯ নভেম্বর বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তথ্য বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশে চিকিৎসা বাবদ প্রকৃত ব্যয় আরো বেশি, যা প্রতি বছর অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা।
বিদেশ সফরকারী বাংলাদেশীদের প্রধান গন্তব্যই এখন পড়শি ভারত। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে ৩৫ হাজার রোগী শুধু চিকিৎসা ভিসায় ভারতে যান। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ভারতে ২০০৯ সালে চিকিৎসা নিতে অন্য দেশ থেকে যত মানুষ গেছেন, এর মধ্যে বাংলাদেশীর হার ছিল ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তখন ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ মেডিক্যাল ট্যুরিস্টে তালিকার শীর্ষে ছিল মালদ্বীপ। পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশীর হার বেড়েছে; বিপরীতে কমেছে মালদ্বীপের। ১০ বছর পর ২০১৯ সালে ভারতে মেডিক্যাল ট্যুরিস্টদের মধ্যে বাংলাদেশীর হার দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ, বিপরীতে মালদ্বীপের হার মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরামের তথ্যমতে, প্রতি বছর গড়ে আট লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান, যাদের বেশির ভাগ যান ভারতে। দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য থাইল্যান্ড। তৃতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর। অনেকে ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে গেলেও চিকিৎসাও করিয়ে আসেন। ফলে প্রকৃত সংখ্যা কারো পক্ষে জানার সুযোগ নেই। বিবিএসের জরিপ, বাংলাদেশ থেকে বছরে চার লাখ ৬০ হাজার মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যান। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে, বিদেশগামী বাংলাদেশীদের ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশের গন্তব্য ছিল ভারত।
কেন এই প্রবণতা? এমন প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, দেশীয় চিকিৎসাসেবার চেয়ে বিদেশে চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা বেশি। খরচও তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে ভারতে চিকিৎসাব্যয় আমাদের দেশের চেয়ে কম। সেখানকার অনেক হাসপাতালের চিকিৎসাব্যয় বাংলাদেশের কাছাকাছি কিংবা কম হওয়ায় বহু বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য দেশটিতে যাচ্ছেন। লক্ষণীয়, চিকিৎসা নিতে উচ্চবিত্তরা প্রধানত সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। মধ্যবিত্তরা যান ভারতে। ইদানীং তুরস্ক ও দুবাইয়েও চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশ দু’টিতে প্রতিদিন অর্ধশত বাংলাদেশী চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।
একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতায় মানুষ বাইরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। অথচ বিশ্বের নাম করা হাসপাতালগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বাধা দেয়া হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তবে বিদেশী চিকিৎসক ও নার্স আনার ক্ষেত্রে শর্ত দিয়ে রাখায় ‘মানের প্রশ্নে’ হাসপাতাল খোলার ব্যাপারে রাজি নয় মাউন্ট এলিজাবেথ।
দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা যখন উন্নত ছিল না; তখন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতেন। সে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও সামর্থ্যবানরা এখনো চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী রয়ে গেছেন। এর পেছনে মূল কারণ দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা। এর জন্য দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাই দায়ী। অবস্থা হলো- সরকারি হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আবার দেশের যে ক’টি বেসরকারি হাসপাতালে মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়, সেগুলোর ব্যয় অনেক বেশি। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী হচ্ছেন। এ প্রবণতা কমাতে হলে দেশের হাসপাতালগুলোর মান বাড়াতে হবে। স্বল্প খরচে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালগুলো আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে বিদেশী বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। তা হলেই সম্ভব বিদেশে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা করানোর প্রবণতা রোধ করা। আর তখনই সম্ভব চিকিৎসা বাবদ বিদেশে বিপুল অর্থ খরচ বন্ধ করা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা