২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আশ্রয়কেন্দ্রে কারখানা! নেতা মাদকের বাহক!

আইন সমভাবে প্রয়োগ করা হোক

-

ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার দুধনই বাজারের পাশে একাধিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র দখল করার অভিযোগ এসেছে। অনেক দিন ধরে বেদখল থাকায় বন্যার সময় দুর্গতরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারেননি। জানা যায়, আশ্রয়কেন্দ্রে প্রভাবশালী ব্যক্তির কারখানা রয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রের ধোবাউড়া সংবাদদাতা এ খবর দিয়েছেন। একই পত্রিকার একই সংখ্যায় আরেক পৃষ্ঠায় রয়েছে রংপুরের পীরগাছায় অবৈধ প্রভাবশালীদের রেলের জমি বেআইনিভাবে দখলের সচিত্র সংবাদ। এটা দেশের বহু জায়গায় ঘটে এলেও কর্তৃপক্ষের সাড়া-শব্দ নেই। অন্য দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয়ে মাদক বহন করার দায়ে ক্ষমতাসীন দলের এক যুবনেতার কারাদণ্ড হয়েছে, যা প্রশংসনীয় এবং বিচারকের সৎসাহসের পরিচায়ক।
উল্লিখিত পত্রিকার ধোবাউড়া সংবাদদাতা জানান, সেখানে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র প্রভাবশালী ব্যক্তির দখলে। সেখানে তিনি ‘স্যানিটারি’ কারখানা বানিয়েছেন। তিনি বাস করছেন আশ্রয়কেন্দ্রটির মধ্যেই এবং এর পাশেই গবাদিপশু রাখছেন গোয়ালঘর বানিয়ে। আলোচ্য প্রতিবেদনের ভাষায়, ‘এতে আশ্রয়কেন্দ্রের পরিবেশ নোংরা হয়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে।’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘এ ব্যক্তি আশ্রয়কেন্দ্রটিকে বহু দিন ধরে নিজের বাড়ির মতো ব্যবহার করছেন। সেটি দখল করে কারখানা তৈরি করেছেন। রাতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানের অপরিচিত লোকজনকে টাকার বিনিময়ে থাকার সুযোগ দেয়া হয়। ফলে ‘অসামাজিক’ কাজও ঘটে যায় এখানে।’
জানা গেছে, দু’দশক আগে ধোবাউড়া উপজেলায় নিচু ও বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে স্থানীয় দুধনই বাজারের পাশে সরকার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছিল; কিন্তু কয়েক বছর পরই তার দখল চলে যায় অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে। অপর দিকে দুর্যোগকালেও প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয় বানভাসি মানুষকে। এতদিন দখল করে রাখার পর সে ব্যক্তি বলেছেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন এখানে আছি। তবে বন্যার সময়ে তা ছেড়ে দেবো।’ এ দিকে উপজেলার প্রকৌশলীর বক্তব্য, ‘পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো’। তবে কখন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন কিংবা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, তা বলা হয়নি।
একই সংবাদপত্রের এক সচিত্র সংবাদে উত্তরবঙ্গের পীরগাছা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সেখানে রেলের জমি বা ভূসম্পত্তি দখলের মহোৎসব চলছে। সাথের ছবিতে দেখা যায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রেলওয়ের জমিতে অবাধে স্থাপনা তৈরি করছেন। কর্তৃপক্ষ দেখেও তা অবৈধ দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। অবৈধ দখলদারদের কেউ হাট বসিয়ে ‘খাজনা’ তুলছেন, ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পীরগাছায় একটি রেলস্টেশনের লাগোয়া ৪০ শতাংশ জমি দখল করে অবকাঠামো বানানো হচ্ছে।
আমাদের কথা হলো, আইন সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করাই ন্যায়নীতি ও গণতন্ত্রের বিধান। অন্যথায় বৈষম্য দেখা দেয়, যা সাম্য ও সুবিচারের পরিপন্থী। ক্ষমতাসীন দলের লোক হোক বা না হোক; রাজনৈতিক প্রভাব থাকুক বা না থাকুক, সবাইকে সমানভাবে বিবেচনা করাই ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত। ময়মনসিংহের আশ্রয়কেন্দ্র দখল কিংবা রংপুরে রেলের জমিতে কাঠামো নির্মাণ- সব ক্ষেত্রেই এ নীতি প্রযোজ্য।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল