কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যার পেছনে কারা
‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হচ্ছেন আসামিরা- ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে এক সহযোগীসহ খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি ছিল পেছনে কারা এবং কী কারণে হত্যার মতো গুরুতর ঘটনা ঘটিয়েছে তার উদঘাটন।
জনপ্রতিনিধি হত্যার একটি প্রবণতা বাংলাদেশে রয়েছে। সাধারণত কোনো একজন জনপ্রিয়তায় অথবা আধিপত্য বিস্তারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলে অনেকসময় তিনি হত্যার শিকার হয়ে থাকেন। ভবিষ্যতে যাতে এমন হত্যা বন্ধ হয়, সে জন্য যদি ষড়যন্ত্রকারী কোনো চক্র থাকে তাদের পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ করা জরুরি। একই সাথে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কাজ। এর আগে সংঘটিত বহু জনপ্রতিনিধি হত্যার কারণ অনুদঘাটিতই রয়ে গেছে। ফলে এখনো সহজে জনপ্রতিনিধি হত্যা করতে সাহস পাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যায় দেখা যাচ্ছে- দুই দফায় প্রথম দিকের সন্দেহভাজনরা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কি আগের জনপ্রতিনিধি হত্যার বিচারের মতো ধোঁয়াশায় পরিণত হবে?
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত বুধবার রাত সোয়া ১টায় কুমিল্লার গোমতী নদীর বেড়িবাঁধের চানপুর এলাকায় কাউন্সিলর হত্যার প্রধান আসামি নগরের সুজানগর বউবাজার এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। পুলিশের বর্ণনায় জানা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, কয়েকজন অস্ত্রধারী দুষ্কৃতকারী বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। এরপর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের সমন্বয়ে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালায়। রাত আনুমানিক পৌনে ১টার দিকে অভিযানস্থলে পৌঁছালে দুষ্কৃতকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। ওই ব্যক্তির হাতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তি কাউন্সিলর হত্যামামলার প্রধান আসামি শাহ আলম।
দেশের সংবাদমাধ্যম ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘অ্যানকাউন্টারের’ খবর প্রকাশ করে আসছে বছরের পর বছর। এসব ঘটনার স্থান-কাল-পাত্র বদলায়; কিন্তু ধারাবর্ণনায় অদ্ভূতভাবে মিল পাওয়া যায়। শাহ আলম নিহত হওয়ার ঘটনার বর্ণনাটিও অনুরূপ। আশ্চর্যের বিষয় হলো- চাঞ্চল্যকর এ হত্যার আরো দুই আসামি এর দু’দিন আগে একই স্থানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এ অবস্থায় এসব ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে সাধারণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ কারণ কী। প্রশ্ন উঠেছে, এজাহারভুক্ত আসামিদের হত্যা করে হোতাদের আড়াল করা হচ্ছে কি না। এ দিকে পুলিশের স্থানীয় এক শীর্ষ কর্মকর্তা একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেই ফেলেছেন, ‘বন্দুকযুদ্ধের’ শিকার তিনজনই কাউন্সিলর হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দী ও সাক্ষী থেকে তিনি এ কথা জেনেছেন বলে জানান। বড় ধরনের একটি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে যদি পুলিশের এমন অবস্থান হয় তাহলে বিচারপ্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। পেছনের ষড়যন্ত্রকারী অশুভ চক্র থাকলে তারা সহজে আড়ালে রয়ে যায় এবং রেহাই পেয়ে যায়।
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আমরা ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বহু ঘটনা দেখেছি। সেসব ঘটনায় দাগি সন্ত্রাসীরা হত্যার শিকার হলে আজ সারা দেশে তাদের এমন অপ্রতিরোধ্য হওয়ার কথা নয়। যদিও সব অপরাধীর বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর শিকার হয়েছেন বিরোধী রাজনীতির সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা। মাদক অভিযান ঘিরেও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যদিও ওই সব হত্যা মাদক কারবারের বিস্তার ঠেকাতে পারেনি।
কুমিল্লার ঘটনায় দেশের মানুষ ইতোমধ্যে জানেন কারা গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে নেপথ্যে কারা রয়েছেন তারা অজনাই থেকে যাচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের প্রকাশ্যে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো। আমরা আশা করব, বিচারবহির্র্ভূত সব হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত। আগামীতে কেউ যাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার না হন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা