জনমনে সংশয় জাগছে
- ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
আইন নিজের গতিতে চলবে। কথাটি রাজনীতিক ও আইন পেশায় জড়িতদের খুব প্রিয়। আইনের লোকেরা যখন কথাটি বলেন তখন সেটি একটি একাডেমিক বিষয় হিসেবে দেখা যায়। কিন্তু রাজনীতিকরা বললে তার আবার ভিন্ন অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় প্রায়ই। কারণ, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন বা আছেন তাদের কথায় এবং কাজে অনেক সময়ই মিল থাকে না। তারা নিজের ক্ষেত্রে আইনকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে তো দেনই না বরং পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেন। আর প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ততটাই কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে সচেষ্ট থাকেন।
এ বিষয়গুলো এখন এতটাই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে যে, এ নিয়ে কেউ আর তেমন উচ্চবাচ্যও করতে চান না। কিছু বলতে গেলে পরিণতি কী হতে পারে সেটাও কারো জানতে বাকি নেই। দেশের অনেক ঘটনায়ই প্রমাণিত হয়েছে যে, আইন নিজস্ব গতিতে চলছে না বা চলতে দেয়া হচ্ছে না। এমন অনেক ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে যেগুলোর সাথে ক্ষমতাসীন মহলের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। একই রকম অভিযোগে মামলা হলেও কারোটা তুলে নেয়া হয়েছে এ কথা বলে যে, এগুলো রাজনৈতিক কারণে দায়ের করা। আবার অন্যজনের বিরুদ্ধে আইন ঠিকই বলবৎ হয়েছে, এমনকি শাস্তিও দেয়া হয়েছে। এরকম ঘটনা কেবল এক-দুজনের ক্ষেত্রে ঘটেছে তা নয়, বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ক্ষেত্রে ঘটেছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।
শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীই নন; যেকোনো খাতের দোষী, তিনি আমলা, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি বা অন্য যে পেশারই হোনÑ ক্ষমতার আশীর্বাদের হাত তার মাথায় থাকলেই তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন। এমনই আরেকটি দৃষ্টান্ত সম্ভবত সৃষ্টি করতে যাচ্ছে বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা। এ ব্যাংকের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লুপাটের রহস্য উদঘাটন হয়নি ১০ বছরেও। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পরপরই অনুসন্ধানে নামে দুদক। পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মোট ৫৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। এর মধ্যে মাত্র দু’টি মামলার চার্জশিট জমা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ হওয়ায় আদালত তা গ্রহণ করেননি। এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে এখন পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।
একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে দরকারি সব উপায়-উপকরণই দুদকের আছে। তাই একটি ঘটনার সুরাহা ১০ বছরে করা যাবে না এটি বিশ্বাস করা বড়ই কঠিন। যেমনটি বলেছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুদকের যে আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য, তা যদি যথাযথভাবে প্রয়োগ করে, তাহলে এ ধরনের কেলেঙ্কারি দ্রুতই নিষ্পত্তি সম্ভব।
এমন মনে করার অবকাশ আছে যে, দুদক কোনো কারণে স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারছে না। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। মুক্তভাবেই সংস্থাটি কাজ করার কথা। কিন্তু ১০ বছরেও একটি ঘটনার সুরাহা না হলে জনমনে সংশয় দেখা দিতেই পারে। আমরা আশা করি, যেকোনো পরিস্থিতিতে সংস্থাটি তদন্ত ও আইন প্রয়োগের কাজটি যথাযথভাবে চালিয়ে যাবে এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা