২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন

গণতন্ত্র ফেরাতে হবে

-

গণতন্ত্র নিয়ে এখন দেশে জোরালো আলোচনা নেই। তবে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন এখনো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের নির্বাচনও হচ্ছে। সেই অর্থে এ দেশে গণতন্ত্র আছে। এ নির্বাচনগুলোর প্রকৃতি ও কার্যকারিতা নিয়ে মূল্যায়নে দেখা যাবে, নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ খরচ ছাড়া অন্য কিছু হচ্ছে না। জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। অন্যদিকে, রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব দেখা যায়। এ কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই। এ অবস্থায় শাসন পরিচালনায় নানা ধরনের বিচ্যুতি একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুইডেনভিত্তিক নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স (আইডিইএ) এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দুর্বল গণতন্ত্রের কথা জানাচ্ছে।
আইডিইএর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ‘কর্তৃত্ববাদী’ শাসন চলছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তাদের ভাষায়, ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল অবধি আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনের প্রকৃতি এ পতনের মধ্যে রয়েছে। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমাদের চর্চাকৃত শাসন প্রতিষ্ঠানটির বিবেচনায় ‘দুর্বল গণতন্ত্র’। আমাদের দেশে নির্বাচন চর্চার ব্যাপারেও পর্যবেক্ষণ এসেছে। বিদেশী ওই প্রতিষ্ঠানের ভাষায়, কিছু স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের অধীনে নিয়মিত নির্বাচন হচ্ছে যা মোটেই স্বাধীন, অংশগ্রহণমূলক ও অনিয়মমুক্ত নয়। সংস্থাটির এ পর্যবেক্ষণ আমাদের চলমান নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে মিলে যায়। বর্তমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দেখে তা সহজে বোঝা যায়। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ অনেক এলাকায় সবার জন্য নেই। শুধু ক্ষমতাসীন দলের কিছু ব্যক্তির ওপর এটি নির্ভর করছে। সে কারণে সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের অসংখ্য প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কিছু জেলা ও উপজেলায় নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এক বিবৃতিতে এ ধরনের দু’টি উপজেলার নাম জানিয়েছেন। অন্য দিকে, নির্বাচনে প্রার্থী হলেই যে সুস্থ প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কিংবা জনগণের ভোটদানে প্রার্থী নির্বাচিত হবেন সেই নিশ্চয়তা সীমিত হয়ে গেছে। এ জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এবার সারা দেশে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। পেশিশক্তিতে বলীয়ানরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়েছেন। আর আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে দেখা যাচ্ছে অকার্যকর। বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনের একটিতে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। আরেকটিতে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট সম্পন্ন হয়ে যায়। সেই অর্থে জাতীয় নির্বাচনের অবস্থা স্থানীয় নির্বাচনের চেয়েও শোচনীয়।
আইনের প্রয়োগ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো নয়। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য বিরাজ করছে। অনেকে সরাসরি অপরাধ করেও বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ না থাকলেও গ্যাঁড়াকলে পড়ছেন। আবার গুম-খুন-অপহরণের মতো গুরুতর ঘটনার শিকার হওয়ার পর অনেক পরিবার বিচার পাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গণতান্ত্রিক শাসনের ক্ষেত্রে দেশগুলো কেমন করছে তা নিয়ে আইডিইএ পাঁচটি শ্রেণিবিভাজন করেছে। ভাগগুলো হচ্ছেÑ সবচেয়ে ভালো গণতন্ত্র, মধ্যম মানের গণতন্ত্র, দুর্বল গণতন্ত্র, হাইব্রিড সরকার ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। বাংলাদেশ সর্বশেষ শ্রেণীÑ স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের তালিকায় রয়েছে। নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের উপলব্ধি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, এ দেশের কক্ষচ্যুত গণতন্ত্রকে সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য দল-মত নির্বিশেষে সবার একযোগে প্রচেষ্টা চালানো জরুরি কর্তব্য।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল