২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কুমিঠল্লায় গুলিতে সঙ্গীসহ কাউন্সিলর নিহত

রাজনৈতিক হত্যাও সাধারণ হয়ে উঠছে

-

দেশে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও খুনের মতো নির্মম ঘটনা ঘটছে। উদ্বেগের বিষয় হলোÑ ইদানীং হত্যার ঘটনাও আমাদের সমাজে সহনীয় হয়ে উঠছে। সবার মধ্যে এমন একটি মনোভাব তৈরি হচ্ছে, নিজেদের কেউ হত্যার শিকার না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে সমাজতাত্ত্বিকদের মত হলো, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতার অভাবে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে। অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে, পরিবার যেখানে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হওয়ার কথা, সেখানেও সন্তানের হাতে বাবা-মা, বাবা-মায়ের হাতে সন্তান এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের হাতে হরহামেশাই খুন হচ্ছেন। সামাজিক অস্থিরতা-অবক্ষয় এবং ভোগবাদী সংস্কৃতির বিষফল হিসেবে স্বার্থপরতা এর কারণ। একই সাথে এ কথাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতিও এ ক্ষেত্রে কম দায়ী নয়। দেশে আইনের শাসন দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে বিচারহীনতাই এর জন্য মুখ্যত দায়ী। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রায় ১০ বছর চলে গেলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদনই এখনো জমা দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
সামাজিক কারণে খুনাখুনির পাশাপাশি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডও এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ঘটছে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতায়। কৌতূহলোদ্দীপক হলো, নির্বাচন ঘিরে হাঙ্গামার দায়িত্ব নিতে রাজি নয় ইসি। এই যখন দেশের সার্বিক অবস্থা; তখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মো: সোহেলকে তার সহযোগী হরিপদসহ নগরের পাথরিয়াপাড়ার কার্যালয়ে ঢুকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার বিকেলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরো চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মো: সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রও ছিলেন। ২০১২ ও ২০১৭ সালে তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। আর হরিপদ সাহা ছিলেন নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে কাউন্সিলর সৈয়দ মো: সোহেল নিজ কার্যালয়ে বসে রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন। তখন তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। আধিপত্য বিস্তার ও দলীয় কোন্দল নিয়ে কুমিল্লায় এর আগেও আরো দু’জন খুন হন। ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে ধনপুর এলাকায় কুপিয়ে এবং ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর দেলোয়ার হোসেনকে বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে জিল্লুর ছিলেন যুবলীগ নেতা; ২০১৭ সালে সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। আর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ারও একই বছর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা বেড়েছে। বাস্তবে এখন দেশ থেকে অবাধ নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নির্বাসিত। সরকারি দলের প্রার্থী হলেই যেকোনো পর্যায়ের নির্বাচনে বিজয় সুনিশ্চিত প্রায়। সাথে সাথে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের প্রবণতাও বেড়েছে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে প্রতিযোগিতার কোনো সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই। ফলে শাসক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠছে। যেকোনো দলীয় পদ বাগাতে পারলে এবং জনপ্রতিনিধি হলে অঢেল অর্থের মালিক হওয়া যায় বলে ক্ষমতাসীন দলের মাঠপর্যায়েও দলীয় কোন্দল তীব্রতর হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার এটিই কারণ। আর এসব খুনের বেশির ভাগের বিচার না হওয়ায় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডও সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠছে। এ প্রবণতা সবার জন্যই বিপজ্জনক।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল