অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক
- ২৩ নভেম্বর ২০২১, ০০:৩১
শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনের ভাড়ায় ছাড় দেয়ার বিষয়টি সেই পাকিস্তান আমল থেকেই চলে আসছে। বিশেষ করে বাস সার্ভিসে এটি এখনো অনেক রুটে চালু আছে; কিন্তু সম্প্রতি এ নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে যখন পরিবহন শ্রমিকরা বাসে শিক্ষার্থীদের ভাড়ার ক্ষেত্রে ছাড় দিতে অস্বীকার করছেন। এ নিয়ে রাজধানীসহ দেশের অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীরা দাবি জানাচ্ছেন। আন্দোলনে নেমেছেন। আর তাতে বাড়তি উত্তেজনা যোগ করছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জনগণের যেকোনো দাবি বা আন্দোলন অঙ্কুরেই নির্মূল করতে পুলিশের পাশাপাশি ক্ষতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ভূমিকা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। নিরাপদ সড়ক চাইসহ শিক্ষার্থীদের সব আন্দোলনই দমাতে মাঠে নেমে পড়েছিল ছাত্রলীগ। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাসের (অর্ধেক ভাড়া) দাবিতে গত তিন-চার দিন ধরে রাজধানীতে ছাত্রদের যে আন্দোলন চলছে তাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা মহাখালীর আমতলীতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। এতে তিতুমীর কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ দিকে পরিবহন শ্রমিকদের বেপরোয়াভাব আরো তীব্রতর হয়েছে। সঙ্ঘবদ্ধ এই শ্রমিকদের ব্যবহার করে যখন তখন সড়কে যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে পণবন্দী করছেন পরিবহন মালিকরা। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় এমনই ঘটনা ঘটেছে। মানুষকে অসহায় করে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছেন মালিকরা। এক লাফে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ঘটনা দেশে নজিরবিহীন।
এবারের ছাত্র আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি নোংরামির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ভাড়া নিয়ে বিবাদের একপর্যায়ে এক পরিবহন শ্রমিক ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে। একজন পরিবহন শ্রমিকের এমন ঔদ্ধত্য শুধু অবিশ্বাস্যই নয়, উদ্বেগেরও কারণ। আমাদের বর্তমান বাস্তবতা হলোÑ ক্ষমতার আশ্রয়ে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির মুখের বুলি ও শরীরী ভাষা যদি হয় পেশিশক্তির, তাহলে সংগঠিত পরিবহন শ্রমিকরা লাই পাবেন না তো আর কে পাবেন? বদরুন্নেসার শিক্ষার্থী হেনস্তায় জড়িত ‘ঠিকানা পরিবহন’ বাসের হেলপারকে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তা না হলে ফের রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
একবারে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পরও পরিবহন মালিকরা সন্তুষ্ট নন। তারা এখনো বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। সেটি জবরদস্তি করেই। বাস বন্ধ করে দিচ্ছেন যখন তখন। সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। অথচ ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের যে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের সমস্যা নয়। সাধারণ মানুষেরই সমস্যা। কারণ শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যয়ভার অভিভাবকদেরই বহন করতে হয়।
হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ জন্য টাস্কফোর্সও গঠনের কথা বলেছেন। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ২০১৫ সালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছিলেন, ‘আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, রাজধানীতে চলাচলরত বিআরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবে; না নিলে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’। মন্ত্রীদের এসব ঘোষণা যে কথার কথা, তা বুঝতে কারো বাকি আছে বলে মনে হয় না।
আমরা আশা করি, পরিস্থিতির আরো অবনতির আগেই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে পরিবহনে তাদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এটি ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকের জন্য কিঞ্চিৎ হলেও স্বস্তিদায়ক হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা