সীমান্ত নিরাপত্তায় মনোযোগী হতে হবে
- ২২ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
বাংলাদেশের চার পাশে দু’টি দেশ ও একটি সাগর। ভারতের সাথে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত। এ সীমান্তে পৃথিবীর অন্যতম বৈরী পরিবেশ বিরাজ করে সারা বছর। সামরিক জান্তা শাসিত মিয়ানমারের সাথে আমাদের বাকি সীমান্ত। ভারতের সীমান্তরক্ষীরা যেভাবে আমাদের নাগরিকদের হত্যা-নির্যাতন করে থাকে মিয়ানমার ততটা আগ্রাসী নয়। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট বৈরিতায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা ক্রমে যেন ভারতীয়দের অনুসরণ করতে চাইছে। বঙ্গোপসাগরে প্রায়ই তারা আগ্রাসী হয়ে উঠছে। কিছু দিন পরপর আমাদের জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়তি হিসেবে যোগ হয়েছে বর্ডারলাইন ক্রস। নেপিডো ভুলবশত এসব করছে এমন নয়; সীমালঙ্ঘনের পর দেশটির দুঃখ প্রকাশ করতেও দেখা যায় না।
গত শনিবার বঙ্গোপসাগরে চারটি ট্রলারসহ ২২ বাংলাদেশী জেলেকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার নৌবাহিনী। সেন্টমার্টিনের সীমান্তসংলগ্ন সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় এ অভিযান চালায়। এ ঘটনার পর ট্রলার ও জেলেদের উদ্ধারে ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের দ্বারস্থ হতে হয়। কূটনৈতিক চ্যানেলে চেষ্টা চালানোর বেশ কয়েক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। মাছ ধরার ট্রলার ও জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা মিয়ানমারের বাহিনী প্রায়ই করছে। ২০১৭ সালে একটি ট্রলার ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। এ সময় জেলেদের আটজনকে ধরে নিয়ে যায়। বাকি কয়েকজন পালিয়ে এসে ঘটনা জানান। সীমান্তের নাফ নদীতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে মিয়ানমার। ২০১৮ সালে নাফ নদীতে নৌকায় মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। ২০১৯ সালে আবারো নাফ নদী থেকে চার জেলেকে ধরে নিয়ে যায়।
বাংলাদেশের জলসীমা থেকে শুধু জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন নয়; অনেকসময় সীমান্তবর্তী দেশগুলোর জেলেরা আমাদের জলসীমায় ঢুকে অবৈধভাবে মাছও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোর যথাযথ প্রতিকার না পাওয়ার খবরও রয়েছে। মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত নিয়ে আরো কিছু সমস্যাও বিগত কয়েক বছর দেখা গেছে। দেশটি প্রায় সীমানা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ ক্ষেত্রে আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। মিয়ানমার সামরিক যান কয়েকবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। এ ধরনের ঘটনার পর দেশটিকে বারবার সতর্কের পরও সীমালঙ্ঘন করেই যাচ্ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উৎখাত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়ে দেশটি একসাথে দুটো অন্যায় করেছে। এক দিকে একটি জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটন করেছে; অন্য দিকে এর পুরো দায়ভার চাপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ওপর। কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকার পর ঢাকাকে রহিঙ্গাদের দায় বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন ছাড়া বিশ্বের আর কোনো সীমান্তে এমন বৈরিতা দেখা যায় না। চার দিকে বৈরী পরিবেশ নিয়ে বসবাস অস্বস্তিকর। এখানে আমাদের বোঝার বিষয় রয়েছে। পাকিস্তান ও চীনের সাথে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, সেখানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা একজনকেও হত্যা করে না। যদিও দেশ দু’টির শত্রুতা প্রকাশ্য। অন্য দিকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু কার্যত সেই বন্ধুত্বের কোনো প্রতিফলন নেই। মিয়ানমারের সাথে ভারতের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলেও সীমান্তে দেশটি আমাদের ওপর হামলা করে না। তবে বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারও আমাদের ওপর চড়াও হচ্ছে। খবরে প্রকাশ, জেলেদের ফেরত দেয়ার সময় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে শর্ত দেয়া হয়েছে তারা যেন আর সীমানা লঙ্ঘন না করে। আমরা চাইব প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক; যেন সীমান্তে বাংলাদেশীরা বৈরী আচরণের শিকার না হন। সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে আক্রমণ ও ভয়ভীতির মুখে পড়তে না হয়। আমরা মনে করি সীমান্তে নিরাপত্তা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজেদের অধিকার রক্ষায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো মনোযোগী হতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা