সামাজিক জীবনের অভাব
- ২১ নভেম্বর ২০২১, ০২:৫০
আত্মহত্যা একটি সামাজিক সমস্যা। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও একে কখনো শুধু বায়োলজিক্যাল সমস্যা হিসেবে দেখা হয় না। এর সাথে সবসময় সামাজিক- সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা জড়িত থাকে। আজকের বাংলাদেশে যে সামাজিক সমস্যা এবং পারিবারিক বন্ধন তা আগের থেকে অনেক বদলে গেছে। বিশেষত পরিবারগুলো একক পরিবার হয়ে গেছে। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে গেছে। তাই দেখা যাচ্ছেÑ সাম্প্রতিক সময়ে কম বয়সীদের মধ্যে এ প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। সম্প্রতি যেকোনো পরিসংখ্যান থেকে এর সত্যতা মিলবে।
আত্মহত্যা কেউ তখনই করে যখন সে মনে করে তার আর বাঁচার কোনো জায়গা নেই, সে একা হয়ে গেছে, জীবনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। সংগ্রামের যে ধারাবাহিকতা তা আর নিতে পারছে না। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে এখন মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। বেশির ভাগ মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে; সে কারণে আত্মহত্যার ঝুঁকিও বাড়ছে। মানুষ যখন বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে এবং অন্যদের সাথে বন্ধন কমতে থাকে; তখন তার পক্ষে আত্মহত্যা করা অনেক সহজ।
সাধারণত কম বয়সীদের ক্ষেত্রে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মহত্যা ঘটে। আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু কম বয়সীরা অভিমানবশতও আত্মহত্যা করতে পারে। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে তারা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মহত্যা ঘটায়। কম বয়সীরা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আবার আবেগপ্রবণ হওয়ায় হঠাৎ করে আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা ঘটায়। অন্যান্য দেশে ডিপ্রেসিভ অর্ডারে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। বাংলাদেশেও এ ধরনের রোগীরা আত্মহত্যা করে থাকে। তবে এ ধরনের রোগীদের মধ্যে যখন আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে; তখন তাদের মধ্যে আত্মহত্যা মহাপাপ এই ধর্মীয় মূল্যবোধ তীব্রতর হয়। এটি তাদের একধরনের নিরাপত্তা দেয়। অর্থাৎ ধর্মীয় মূল্যবোধ এখানে রোগীকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনছে। কিন্তু কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের মূল্যবোধ সেভাবে কাজ করে না। ফলে তাদের আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকেই তাদের পরিবার থেকে জীবনমুখী শিক্ষা দিতে হবে। এর জন্য চাই সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। শিশু-কিশোর ও তরুণদের মানসিকভাবে সহায়তায় শহরে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কাউন্সেলর নিয়োগ দেয়া উচিত। জরুরি ভিত্তিতে কিছু হেল্পলাইন চালু করা দরকার।
অন্য দিকে শিশু-কিশোর-তরুণরা খুব অল্পতেই উত্তেজিত ও আবেগপ্রবণ হয়ে আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে তারা যেভাবে সমাজকে দেখে বাস্তবতা তা থেকে ভিন্ন। এ অবস্থায় কম বয়সীরা নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে মিল খুঁজে পায় না। এই ঘাটতি তাদের ওপর একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে, যা তারা নিতে পারে না। আবার কম বয়সীরা মনের কথা মা-বাবার সাথেও ভাগাভাগি করতে পারে না। ছোট ছোট বিষয়ে কম বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ, পরিবারের সদস্যদের চাহিদাগুলো এখন অনেক বেশি। আমাদের ভেতরে ভোগবাদী সংস্কৃতি এত বেশি ঢুকে গেছে যে, ছেলেমেয়েরা অভিভাবকের কাছে কোনো কিছু আবদার করে না পেলেই ভাবে, তাদের জীবন শেষ! বিশেষ করে যে পরিবারগুলোয় একটি সন্তান তাদের সামাজিকীকরণ এমনভাবে হয় যে, তারা এককেন্দ্রিক হয়ে গড়ে ওঠে; নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে, ভাগাভাগির মানসিকতা থাকে না। নাগরিক জীবনের অনেক শিশু-কিশোরই কোনো কিছু ভাগাভাগি করে উপভোগ করার মানসিকতার সাথে এখন আর পরিচিত নয়। আবার ব্যস্ততার কারণে অভিভাবকরাও সন্তান আবদার করা মাত্র কোনো কিছু চাইলেই কিনে দিয়ে শান্ত করেন। এসব কারণ কম বয়সীদের আত্মহত্যায় আরো প্ররোচিত করছে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতো আমরাও মনে করি, অল্প বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দূর করতে হলে পরিবারকে শিশু-কিশোরদের সময় দিতে হবে। সন্তান কার সাথে এবং কিভাবে মিশছে, কী চাচ্ছে এগুলো লক্ষ রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এ জন্য কাউন্সেলিং থাকা দরকার। সেখানে মনোবিজ্ঞানী রাখতে হবে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী যদি অদ্ভুত আচরণ করে তাহলে মনোবিজ্ঞানীরা বিষয়টি দেখতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের সাংস্কৃতিক বলয় আরো বাড়ানো উচিত। এতে একটি শিশু তার ছোট চাহিদাগুলো ভুলে বৃহত্তর একটি সমাজের সাথে নিজেকে অভিযোজন করতে পারলে তার মধ্য থেকে আত্মহত্যার চিন্তা সরে যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা