রোকেয়া হলে নির্যাতনের প্রতিকার হতে হবে
- ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০১:৪০
বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন ছাত্ররা আসেন এক বুক আশা নিয়ে। এখান থেকে তার জীবনের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাওয়ার প্রত্যাশা থাকে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ইতিবাচক মানসিকতাই থাকে নবাগত শিক্ষার্থীর। দুর্ভাগ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগতরা প্রায়ই বড়দের কাছ থেকে নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ পায়। সিনিয়রদের আচরণ কখনও এমন পর্যায়ের হয় যে, তার ফলে সৃষ্ট মানসিক ধকল কাটিয়ে ওঠা নবাগতের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। সারা জীবনের জন্য তার সে মানসিক জখম স্থায়ী হয়ে যায়। র্যাগিংয়ের নামে এ অপসংস্কৃতি বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চালু করা হয়েছে। প্রকাশ্যে র্যাগিং নেই বা র্যাগিংকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এর প্রতিবিধানের জন্য কমিটিও আছে; কিন্তু বাস্তবে এখনো নানা কায়দায় ছাত্র নির্যাতন চলছে। কখনও র্যাগ ডে’র নামে, কখনও রাজনৈতিক দাপটের কারণে। আর সন্ত্রাসীদের কঠিন নিয়ন্ত্রণের কারণে নির্যাতিত অপমানিত ছাত্ররা মুখ খুলতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে দু’জন ছাত্রীর ওপর রাতভর নির্যাতন চালানো হয়েছে। ভুক্তভোগীদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, গত ১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে হলের ৪ নম্বর রুমের দু’জন শিক্ষার্থীকে সাধারণ একটি অসিলা ধরে রাতভর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে। তারা জানিয়েছিল আমরা প্রশাসনিকভাবে বৈধতা নিয়ে হলে থাকি। এতে নির্যাতনকারী ছাত্রীরা আরো বেশি করে চড়াও হয়। তারা জানায়, কিসের প্রশাসন, আমাদের অনুগ্রহে তোমরা হলে থাকো। এরপর তাদের কথামতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাচতে বাধ্য করা হয়। ভুক্তভোগীদের একজন কিছু দিন আগে তার মাকে হারিয়েছে। এ ধরনের মানসিক নির্যাতনের কষ্ট তিনি সইতে পারছেন না। অভিযোগের বিষয়টি প্রশাসন নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে; কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাত্রীদের মধ্যে এই উচ্ছৃঙ্খলতা কেন দেখা দিচ্ছে। এদের পেছনে অন্য কোনো শক্তি কাজ করছে কি না যারা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য পেছন থেকে কাজ করছে। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনন্দ ও নানা অনুষ্ঠান উদযাপন করবে এটা স্বাভাবিক। তবে তাতে শালীনতা থাকা জরুরি। নবাগত ছাত্রদের নিয়মকানুন সৌজন্য শেখানোর নামে র্যাগিংয়ের প্রচলন হয়। শেষ পর্যন্ত এটি বিকৃত রূপ পায়, একটি বিশ্রী রোগ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। জুনিয়দের অত্যন্ত বাজেভাবে নিগ্রহ করে যারা সুখ পায় তাদের মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত বলা যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ভয়াবহ বিস্তার ঘটে। এ ছাড়া গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতি এর সাথে বাড়তি নির্যাতনের অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত আছে। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা এসব রুম তাদের পেশিশক্তি বিস্তারের জন্য ব্যবহার করে। কাউকে মারধর হেনস্তা ও অন্যায়-অপমান করা একটি নিয়মিত ব্যাপার সেখানে।
সামাজিক প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র্যাগিং নিষিদ্ধ করা হয়। তার পরও এ পবণতা বন্ধ হচ্ছে না। ক্ষমতার রাজনীতির হাত ধরে এর নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি বুয়েটে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে কতটা পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। রোকেয়া হলের ছাত্রী নির্যাতনের খবর থেকে অনুমান করা যাচ্ছে নির্যাতিতরা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিবেশ স্বাভাবিক নয়, কাম্যও নয়। আবরার ফাহাদের হত্যার পর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার আশা করা হয়েছিল, বাস্তবে তা ঘটেনি। আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখবে। ক্যাম্পাসে এভাবে আরো কত শিক্ষার্থী নিগৃহীত হচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা