২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বেশির ভাগ শিক্ষালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অচল

‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশের নমুনা

-

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পারদর্শী করতে সরকার অনেক পরিকল্পনা হাতে নিলেও তা দেশের কোনো কোনো এলাকায় ব্যর্থ হতে বসেছে। কারণ অনেক এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাবরেটরি’র এখন বেহাল দশা। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই এই ল্যাব ব্যবহৃত হয় না। তদুপরি রয়েছে যোগ্য শিক্ষকের সঙ্কট। শিক্ষক থাকলেও তাদের সংশ্লিষ্ট সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষা বিভাগ তদারক করছে না, বাস্তবে কী অবস্থা। এ প্রেক্ষাপটে ল্যাবগুলো নামসর্বস্ব হয়ে পড়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে এ কথা জানা যায়।
তথ্যপ্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাবঞ্চনার এ চিত্র তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪, ’১৬ ও ’২০ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, আইসিটি অধিদফতর থেকে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপিত হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ কর্মসূচির (সেসিপ) আওতায় পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলাদা কম্পিউটার ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক ল্যাবে ১৭ থেকে ২২টি ল্যাপটপ এবং আইটি-সংশ্লিষ্ট উপকরণ দেয়া হয়েছে। দুই কোটি টাকার মতো ব্যয় করে এসব ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলতে হয়, সৈয়দপুরের খালিশা বেলপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিপাইগঞ্জ হাইস্কুলে গিয়ে কোনো কম্পিউটার দেখা যায়নি। অথচ লেখা আছে ‘শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব’। সেখানে অব্যবহৃত কিছু মালপত্র এবং পুরনো খাতা-বই রাখা হয়েছে। কম্পিউটারের প্রাকটিক্যাল ক্লাস কোথায় হয়, তা ক্লাস নাইনের দু’জন শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হলে মনে হয়েছে, এর সাথে তাদের কোনো পরিচয় হয়নি। তারাও জানায়, তাদের কোনো ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হয়নি। জানা যায়, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থাও অভিন্ন।
এ দিকে সিপাইগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, কয়েকটি ল্যাপটপ অকেজো। স্কুলে রুমের অভাব থাকায় শিক্ষকরা কম্পিউটার ল্যাবকে তাদের কমনরুমরূপেও কাজে লাগিয়ে থাকেন। খালিশা স্কুলের অধ্যক্ষের বক্তব্য, বিদ্যুতের লোডশেডিং ল্যাব কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় বাধা। তদুপরি, ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া সহজ নয়। এ ছাড়া ল্যাবে যথেষ্ট ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ নেই। যেসব ল্যাপটপ এখানে দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি দেয়ার কিছু দিন পর থেকেই অকার্যকর। এ ব্যাপারে উপরে জানানো হলেও মেরামত করা হয়নি এগুলো। শিক্ষার্থী অনেক বলে একসাথে তাদের ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া কঠিন।’
অন্য দিকে, ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা জানান, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অনেকেই ‘পারদর্শী নন’ কম্পিউটারের ব্যাপারে। ফলে অনলাইন কিংবা কম্পিউটারের কাজ বাইরে থেকে করাতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা স্কুলের ল্যাপটপ বাড়িতে ব্যক্তিগত নানা কাজে লাগাচ্ছেন। এ অবস্থায় কোটি টাকা খরচ হলেও ল্যাবগুলো কাজে আসছে না শিক্ষার্থীদের। স্থানীয় গার্লস কলেজের কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বশীল একজন শিক্ষক বলেন, ‘সদিচ্ছা থাকলে সীমিত সামর্থ্যওে ভালো করা যায়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ল্যাব সর্বদাই সচল। প্রতিদিনই গ্রুপের ভিত্তিতে প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ক্লাস করানো হয়। সেখানে তাদের কম্পিটার-সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করা এবং সহজ বহু প্রোগ্রাম শেখানো হয়।’ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেছেন, সব প্রতিষ্ঠানে ল্যাব চালু রাখতে কাজ চলছে। ক্লাস্টার করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেগুলো সক্রিয় করতে চাচ্ছেন।’
ডিজিটাল দেশ গড়া নিঃসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ, যা সময়ের প্রয়োজন পূরণ করবে। তবে এ জন্য নির্বিঘœ বিদ্যুৎ সরবরাহ, মানসম্মত পর্যাপ্ত শিক্ষাদাতা, উপরের নজরদারি ও তদারকি প্রভৃতি আগে নিশ্চিত করা জরুরি।
আমরা আশা করি, অচিরেই সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার সব উদ্যোগ গ্রহণ বা কার্যকর করবে। অন্যথায়, আমরা যে পিছিয়ে পড়ব, সন্দেহ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement