২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জনস্বাস্থ্যে স্বেচ্ছা উদ্যোগ

সন্ধানীর দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হোক তারুণ্য

-

দেশের স্বাস্থ্য খাতের সেবাকার্যক্রম কতটা নাজুক ও ভঙ্গুর তার বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে গত দুই বছরের মহামারীকালে। মহামারীতে বিপন্ন মানুষের সেবায় আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসার পরিবর্তে বিশেষ করে সরকারি খাতের একশ্রেণীর আমলা ও রাজনীতিক কিভাবে এটিকে নিজেদের পকেট ভারী করার সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন; তারও বহু প্রমাণ আমরা পেয়েছি করোনা শনাক্তের ভুয়া পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট দেয়া, টিকা আমদানির চুক্তিসহ নানা দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস হওয়ার মধ্য দিয়ে। সরকারি হাসপাতালের অনেক স্টাফ ও চিকিৎসক রোগীর সেবা দিতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেনÑ সেটি মনে রেখে এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলা দরকার, জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকারি সেবার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেরও প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমেও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে কিভাবে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সফলভাবে ভূমিকা রাখা যায় তার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত ‘সন্ধানী’। রক্তদান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরুর পর এটি এখন দেশের সফলতম সামাজিক সংগঠন। শুধু তাই নয়, এটিকে এখন বলা যায় রক্ত ও চক্ষুদানের ক্ষেত্রে রীতিমতো একটি সামাজিক আন্দোলন। একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালে ছয় মেডিক্যাল শিক্ষার্থী বন্ধুর স্বেচ্ছামূলক উদ্যোগে শুরু হওয়া সন্ধানী এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ব্যাগ রক্ত দিয়েছে দেশের মানুষকে। বছরে তারা গড়ে ৫০ হাজার ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে। এ ছাড়াও সংগঠনটি চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের। এভাবে তারা বহু মানুষের জীবন রক্ষা করেছে এবং জীবন বাঁচাতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। নিরবচ্ছিন্ন ও নিঃস্বার্থ সেবার স্বীকৃতিও তারা পেয়েছে নানাভাবে। ১৯৯৫ সালে সংগঠনটি কমনওয়েলথ ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। ২০০৪ সালে সন্ধানীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার। তার চেয়েও বড় স্বীকৃতি সম্ভবত মানুষের ভালোবাসা। এখন জনমনে এমন এক আস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, আত্মীয়স্বজনের কারো রক্তের দরকার হলেই প্রথমে মনে আসে সন্ধানীর নাম। হয়তো তাদের কাছে পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় রক্ত।
আমরা জানি, দেশে এখন বছরে ছয় লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। এর ৯০ শতাংশই পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীদের কাছ থেকে। স্বেচ্ছায় রক্তদানের এই ধারণাটি গত ৪০ বছরে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে সন্ধানী। রক্তদানের বিষয়টি তখন ছিল ভীতিকর। সন্ধানীর চেষ্টায় মানুষের ভুল ধারণার অবসান ঘটেছে এবং রক্ত দিলে দাতার শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না; বরং উপকার হয়Ñ এই বৈজ্ঞানিক সত্য এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত। এর ফলে একটি বড় পরিবর্তন ঘটেছে সমাজে। চাহিদার ৯০ শতাংশ রক্তই পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। আর এর ফলে পেশাদার রক্তদাতাদের দৌরাত্ম্য কমে গেছে।
কয়েক বছর আগেও হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রাইভেট ব্লাডব্যাংকে পেশাদার রক্তদাতাদের দৌরাত্ম্য ছিল অবাধ। এদের বেশির ভাগই ছিল রক্ত দেয়ার অনুপযোগী। অনেকে ছিল নিজেই নানা রোগে আক্রান্ত, এমনকি মাদকাসক্ত। এদের রক্ত নিয়ে অনেকেই অনেক জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতেন, এমনকি মারাও যেতেন। সন্ধানীর চেষ্টায় এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে।
এই কাজগুলো কিন্তু সরকারিভাবেই করার কথা। সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কোনো ঘাটতি নেই দেশে; কিন্তু সেগুলো এটি করতে পারেনি। সন্ধানীর উদ্যোক্তাদের এ মহৎ দৃষ্টান্ত দেশের সব তরুণ যুবাদের উদ্বুদ্ধ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

 


আরো সংবাদ



premium cement