গণতন্ত্রের জন্য জরুরি
- ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০১:১৬
জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার মাঝে মাঝে এমন কিছু বক্তব্য দেন যা কারো কারো কাছে বিতর্কমূলক মনে হয়। তার বক্তব্যে দেশের চলমান রাজনীতি নির্বাচন ব্যবস্থার একটি চিত্র পাওয়া যায়। বলা যায়, এসব মন্তব্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া নানাভাবে ধ্বংস হওয়ার একধরনের স্বীকৃতি । কারণ তিনি কথা বলেন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবিধানিক একটি পদে অবস্থান করে। কে না জানে, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি হয়। সেই নির্বাচনই যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয় তাহলে গণতন্ত্র বা জনগণের শাসনের কী অবস্থা হয় তা মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যে উঠে আসে।
সম্প্রতি মাহবুব তালুকদার কথা বলেছেন সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনের চালচিত্র বিষয়ে। বলেছেন, নির্বাচনব্যবস্থা ও অবস্থা দেখে তার উদ্বেগের কথা। তিনি ‘রূপকার্থে’ কিন্তু স্পষ্ট করেই বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন এখন আইসিইউতে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অসহিষ্ণু মনোভাব গণতন্ত্রকে অন্তিম অবস্থায় নিয়ে গেছে। এ-ও বলেছেন, একপক্ষীয় কোনো গণতন্ত্র হয় না। গত রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ‘দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ : আমার কথা’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন তিনি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কিত সংবিধানের বিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়ন না করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ আইন করাই যথেষ্ট নয়; বরং সেই আইনে নিরপেক্ষভাবে সব রাজনৈতিক দলের স্বার্থ সংরক্ষণ করা আবশ্যক এবং তা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। তার ভাষায়, একপক্ষীয় আইন করে কোনো লাভ হবে না। একপক্ষীয় আইন কেবল একদলীয় শাসনের পথ উন্মুক্ত করে।
একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মাহবুব তালুকদার যেসব কথা বলছেন তার গুরুত্ব কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ তিনি যা বলছেন তার পেছনে মাঠে-ময়দানে যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে বা এবারে হলো তার বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেন। যেমন এবারের ইউপি নির্বাচনে অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিহীনভাবে অনেক প্রার্থীর জয়ী হওয়ার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে কেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা যায় না তার বাস্তব কারণগুলোও তুলে ধরেছেন।
ইসি মাহবুব তালুকদারের এমনধারা বক্তব্যের পর ইসি বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমন কোনো ব্যবস্থা নেননি বা নিতে পারেননি, আরো স্পষ্ট করে বললে ব্যবস্থা নিতে চাননি যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে। মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যের যেটুকু তার কাছে ঠিক মনে হয় না বা অসত্য বলে বিবেচনা করেন সেগুলো খণ্ডানোর মতো কোনো পাল্টা বক্তব্যও আসে না সিইসি নুরুল হুদার কাছ থেকে। উল্টো তিনি মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই বলে যে, মাহবুব তালুকদার কমিশনকে হেয়, অপদস্থ ও নিচে নামানোর জন্য এসব কথা বলছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কমিশনকে হেয় করছেন। সিইসি তার সময়ে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই অনিয়ম দেখেননি। সবগুলোকেই বৈধতা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি যখন মন্তব্য করেন যে, আমরা আর কোনো নির্বাচনে রাতের ভোট দেখতে চাই না তখন অনিচ্ছায় হলেও তার মুখ থেকে নৈশ ভোটের পরোক্ষ স্বীকৃতি মেলে।
একইভাবে ক্ষমতাসীন দলও ইসি মাহবুবের বক্তব্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজে পায়। সেটি অস্বাভাবিক নয়। কারণ সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা হলে দেশ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র একক ও একচ্ছত্র প্রভাব ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। গণতন্ত্র হলো সবার অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা। আর তাতে সমাজের সর্বস্তরের সব মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকা জরুরি। সেটি অনেকেরই পছন্দ নয়। কিন্তু দেশের স্বার্থে গণতন্ত্র ফেরাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প গ্রহণযোগ্য নয়। এ জন্যই মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য আমলে নেয়া জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা