শক্তির জোরে জনপ্রতিনিধি
- ১৩ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
বাংলাদেশে কোনো পর্যায়ের নির্বাচন নিয়েই মানুষের মধ্যে এখন আর আগ্রহ নেই। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও ক্ষমতাশালীরা মিলে ভোটব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি তামাশা ও ছেলেখেলায় পরিণত করেছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে এতেও ক্ষমতাসীনরা ক্ষান্ত হননি। জোরপূর্বক জনপ্রতিনিধি হতে একে অপরের লাশ ফেলছেন। চলমান ইউপি নির্বাচনে খুনোখুনির খবর সারা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লাশ পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো এবারের দ্বিতীয় দফার ইউপি নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণের হার কেমন এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সহিংসতার খবর। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন যেখানে প্রকৃত চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে; সেখানে তামাশার এ খুনোখুনির আয়োজন কেন। মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী আয়োজন না করে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে বণ্টন করে দিলেই তো হয়! এতে অন্তত মূল্যবান প্রাণের বিনাশ থেকে জাতি বেঁচে যেত।
ভাগাভাগি বা সিলেকশনের মধ্য দিয়ে অনেক জেলায় ক্ষমতাসীনরা ইউপি চেয়ারম্যান নিযুক্ত করছেন। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি দলের নেতারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের নাম ঘোষণা করছেন। নির্বাচন কমিশনকে তাই অনেক এলাকায় মাঠের ভোটের আয়োজন করতে হচ্ছে না। সেখানে খুনোখুনি হচ্ছে না। যেসব জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অর্থ ও অস্ত্রের জোরে সমান; সেখানেই ভয়াবহ সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার নির্বাচনের দিন সাতজন নিহত হয়েছেন। একশত জনের বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তার সংখ্যা আরো বেশি হবেই অনুমেয়। শুধু দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত ইউপি, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ৪৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ছয় হাজার ৪৮ জন। নিহত হয়েছেন ৮৫ জন। সব মিলিয়ে এ বছরের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯২ জন। দুই দফায় ইউপি নির্বাচনে সবমিলে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আরো চারটি ধাপের ইউপি নির্বাচন বাকি রয়েছে। এছাড়া বাকি আছে সন্ত্রাসের কারণে বাদ হয়ে যাওয়া কেন্দ্রগুলোর নির্বাচন। যে হারে মানুষের প্রাণহানি ঘটছে এ হার অব্যাহত থাকলে এতে আরো শ’খানেক মানুষের প্রাণহানি ঘটবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সাথে বহু মানুষের আহত হওয়া ও বিপুল সম্পত্তি বিনাশের ভয় রয়েছে।
প্রত্যেকটি কাজের একট লক্ষ্য বা অর্জন থাকা উচিত। আমাদের দেশের চলমান এসব নির্বাচন থেকে ভালো মানুষ জনিপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসছেন এমন খবর নেই বললেই চলে। এসব নির্বাচনে সেই ব্যক্তিরা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে আসছেন যারা পেশিশক্তিতে পারঙ্গম। দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সমান সুযোগ এখন দেশে নেই। ক্ষমতাবানদের পছন্দের ও প্রিয়জন ছাড়া বাকিরা এখানে খুব কমই প্রার্থী হতে পারেন। সেই হিসেবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জন এর দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। বরং এসব নির্বাচনে সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। আবার প্রাণ ও সম্পদের বিনাশ ঘটছে। আমাদের হয় একটি সুষ্ঠু নির্বাচনীব্যবস্থা কায়েম করতে হবে, না হয় এ অর্থ ও প্রাণের অপচয় বন্ধ করা হোক। এ ব্যাপারে সরকার ও অংশীজনদের বোধোদয় যত তাড়াতাড়ি হবে; সবার জন্য তা তত কল্যাণকর হবে বলেই মনে হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা