২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ

জাতীয় ঐক্য রচনার দিন

-

বাংলাদেশে এখনো গণতন্ত্র সুসংহত হয়নি। নাগরিকদের ভোটাধিকার আজো খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে; ক্ষেত্রবিশেষে ভূলুণ্ঠিত। গণতান্ত্রিক মানসিকতা শক্ত ভিত পায়নি। দেশ পরিচালিত হচ্ছে ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়। সঙ্গত কারণে এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, আমরা এখনো জাতিগতভাবে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে পারিনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অনাস্থার প্রেক্ষাপটে বর্তমান সময়েও জাতির দিন কাটে শঙ্কায়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে ভীতির চোখে দেখছেন নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষ।
বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সে দিনটির প্রাক্কালে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। স্বার্থান্বেষী ও চক্রান্তকারীরা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। স্বাধীন একটি দেশের জন্য যা ছিল সত্যিই মহাদুর্যোগকাল। তবে আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনী ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিয়েছিল দেশবিরোধী চক্রের অপপ্রয়াস। সুসংহত করেছিল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। সংগ্রামী জনতা গর্জে উঠেছিল বিদেশী আগ্রাসন, আধিপত্যবাদ এবং তার দোসরদের ষড়যন্ত্র নস্যাতের দৃঢ়প্রত্যয়ে। সিপাহি-জনতার বৈপ্লবিক সংহতির অনন্য দিনটিতে বাংলাদেশের স্বকীয় জাতিসত্তাসহ অনন্য বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে উঠেছিল। এখনো দেশ ও জাতি নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে সঙ্কটের মুখোমুখি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জাতীয় ঐক্য, সুশাসন ও ঐতিহ্যের চেতনা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। ফলে বৈষম্য আর দুর্নীতির করালগ্রাসে নিপতিত দেশ। রাষ্ট্রযন্ত্রের পরতে পরতে অব্যবস্থাপনা জেঁকে বসেছে। এ অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক দিনটি আমাদের অন্যতম প্রেরণা হতে পারে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সার্বিক মুক্তির জন্য।
১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর রাতে সেনাবাহিনীর তদানীন্তন চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফ হঠাৎ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করে একটি পাল্টা অভ্যুত্থানের পথে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। একই সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার শীর্ষস্থানীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, যা ছিল নজিরবিহীন। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পরিস্থিতি এতই অনিয়ন্ত্রিত ও উদ্বেগজনক হয়ে পড়ে যে, কার্যত তখন সরকারের কোনো অস্তিত্বই অনুভূত হচ্ছিল না। এ দিকে ৬ নভেম্বর রাতে ঢাকায় সিপাহিরা একজোট হয়ে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে আনেন। তাদের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন বিপুল সাধারণ মানুষ। সবাই রাজপথে নেমে সেনাপ্রধানকে স্বাগত এবং সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন দেশকে চরম নৈরাজ্যের মহাবিপদ থেকে রক্ষায়। সেনাপ্রধান জিয়াকে এ অবস্থায় রাষ্ট্রচালনার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের আকাক্সক্ষামাফিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এমন পটপরিবর্তন অভাবনীয়। সৈনিক-জনতা যাকে দেশ চালনার গুরুভার অর্পণ করেছিল, তিনি দৃঢ়তার সাথে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেন শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে। দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের বৈরী শক্তির হাতে তাকে জীবন দিতে হয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেই দিনে যারা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় অনবদ্য অবদান রেখেছেন; তাদের সেই অবদান এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
৭ নভেম্বরের আদর্শ হচ্ছে দেশপ্রেম, জাতীয় মর্যাদা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জনগণের ঐক্য এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধের পরিচর্যা। সর্ববিধ সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে চিন্তাভাবনা ও তৎপর হওয়ার তাগিদ দেয় ঐতিহাসিক দিনটি। আজ আমাদের শপথ নিতে হবে সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসী শক্তির কার্যকর মোকাবেলায়। জাতীয় ইতিহাসে তাৎপর্যময় এই দিনে সবার প্রতি আমাদের আহ্বান: আসুন দ্বিধা, সংশয় ও হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই এক হয়ে দেশ থেকে চিরতরে দূর করি বিভাজনের রাজনীতি, শোষণের অর্থনীতি ও অবক্ষয়ের সংস্কৃতি। সেই সাথে, জাতীয় ঐক্যের শক্তিবলে গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিকাশ এবং মৌলিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করি। সুদৃঢ়প্রত্যয়ে ও যৌথ সংগ্রামে অবসান ঘটাই সন্ত্রাস-সহিংসতা, দুর্নীতি-দলীয়করণ, ক্ষমতার দম্ভ ও অপপ্রয়োগে জর্জরিত সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির যাবতীয় গ্লানি।


আরো সংবাদ



premium cement