০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ব্যক্তির অজান্তেই মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধন

কঠোর নজরদারি জরুরি

-

প্রযুক্তির বদৌলতে মানুষের জীবন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সহজ ও আরামদায়ক হয়েছে বটে। তবে এটিও অনস্বীকার্য যে, কোনো কোনো প্রযুক্তির সুফল-কুফল নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর; যেমন তথ্যপ্রযুক্তি। এর মধ্যে মোবাইল ফোনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এর উদ্ভাবনে যোগাযোগ-মাধ্যমে বিপ্লব ঘটেছে। আমাদের জীবনে এর বহুমাত্রিক প্রভাব অভূতপূর্ব। সামগ্রিক সুফল দীপ্যমান। সাথে সাথে এ কথাও সত্যি যে, শুধু মোবাইল ফোনের অভিঘাতে অনেকের জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। দিন দিন নেতিবাচক এই প্রভাব বাড়ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার এর জন্য দায়ী।
আমাদের দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতারণা নতুন নয় যদিও গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে করে আগের চেয়ে গ্রাহকের নিরাপত্তা রক্ষিত হচ্ছে। ভোগান্তিও কমেছে। তবু নতুন নতুন বিপত্তিও দেখা দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সিম নিবন্ধন ও বিক্রির এত জটিল-কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যেও কিছু রিটেইলার অনেক গ্রাহকের অজ্ঞাতে তাদের নামে অন্যায়ভাবে সিম বিক্রি করেছেন। একজনের অজান্তে তার নামে সিম নিবন্ধন করে অপরাধী চক্রের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এসব সিম ব্যবহার করে সংঘটিত হচ্ছে নানা ধরনের প্রতারণা, হুমকি এবং মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ পাচারের মতো ঘটনা। অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম বিক্রেতা এবং এগুলোর ব্যবহারকারীদের সমন্বয়ে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এতে সাধারণ গ্রাহকের জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অভিযানে এ ধরনের একটি চক্র ধরা পড়ার পর বিষয়টি সামনে আসে। এ বিষয়ে সহযোগী একটি পত্রিকায় গতকাল প্রধান প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সিম নিবন্ধনের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা ও গ্রাউন্ড প্রমোটররা ফাঁদ পেতে বসে আছেন। একজন ব্যক্তি যখন সিম তুলতে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট (আঙুলের ছাপ) দিচ্ছেন, তখন অনেকসময় বিক্রেতা বলে থাকেন, ছাপটি নেয়া সম্ভব হয়নি বা ভালোভাবে হয়নি। আবারো আঙুলের ছাপ নেয়া হয়। এই অপকৌশল করে সিম বিক্রেতা একজনের কাছ থেকে দুই দফায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে রেখে দেন। ক্রেতাকে একটি সিম দিলেও বিক্রেতা পরে আরেকটি সিম তুলে রেখে দেন। সে ক্ষেত্রে ক্রেতা যে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিয়েছিলেন, সেটির অন্য একটি কপি করে পরের সিমে তথ্য যুক্ত করা হয়। এভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্টের ফাঁদ পেতে ক্রেতার অজান্তেই দ্বিতীয় সিমটি তুলে দেয়া হচ্ছে অপরাধী বা প্রতারকদের হাতে। গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানা যায়, অন্যের নামে নিবন্ধিত সিমের ক্রেতার বেশির ভাগই প্রতারক চক্রের সদস্য। চক্রটি অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম কেনার সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং ছবিও নিয়ে থাকে। এরপর ওই মোবাইল নম্বরে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি ব্যবহার করে দেশে প্রচলিত বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এরপর এসব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে করা হয় প্রতারণা। ফলে আসল অপরাধীদের বড় একটা অংশ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
যদিও অতীতে অসদুপায় অবলম্বনের কারণে অপারেটররাই কিছু ডিস্ট্রিবিউটরের সাথে চুক্তি বাতিল করেছেন, তবু এ ধরনের অপরাধের দায় মোবাইল অপারেটরগুলো এড়াতে পারেন না। কারণ ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিষ্ঠান থেকে সিম বিক্রির জন্য তাদের টার্গেট দিয়ে দেয়া হয়। একজন গ্রাউন্ড প্রমোটর বা খুচরা বিক্রেতার মাসে অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ সিম বিক্রির বাধ্যবাধকতা থাকে। এ টার্গেট পূরণ করলে তারা কমিশন পেয়ে থাকেন। এই টার্গেট পূরণ দেখাতেও তারা এক ব্যক্তির নামে একাধিক সিম নিবন্ধন করে বিক্রি দেখিয়ে থাকেন। ফলে নিরপরাধ মানুষের হয়রানির যেমন আশঙ্কা বাড়ছে, তেমনি মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনসহ সার্বিক নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরদের শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখা নয়, গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণার্থে নিজ নিজ ডিস্ট্রিবিউটরের প্রতি কঠোর নজরদারি করতে হবে, যাতে তারা একজনের অজ্ঞাতে তার নামে অন্যকে সিম তুলে দেয়ার মতো অপরাধ করতে না পারেন। একই সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকেও তৎপর থাকতে হবে যাতে কেউ এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তাদের আইনের আওতায় আনা সহজ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement