২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম

মানুষ এসবের শেষ দেখতে চায়

-

দেশে এখন উন্নয়ন প্রকল্প আর দুর্নীতি সমার্থক হয়ে উঠেছে। এমন কোনো প্রকল্প নেই যেটি কোনো রকম অনিয়ম, আর্থিক নয়ছয় এবং ব্যয়বরাদ্দ দুই তিন গুণ বাড়ানো ছাড়া নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সম্ভবত বিশ্বের সামনে একক নজির স্থাপন করেছি। জানা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, প্রকল্পটি শুধু দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য হলেও এতে সুবিধাভোগীদের ১৫ শতাংশই সচ্ছল পরিবারের মানুষ।
গতকাল নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে বলা হয়, ওই প্রকল্পে উপকারভোগীর তালিকা তৈরিতে নীতিমালার তোয়াক্কা করা হয়নি। বরং স্বজনপ্রীতি, ভোটের হিসাব ও রাজনৈতিক প্রভাব মাথায় রেখে তালিকা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক এটিকে খণ্ডিত চিত্র বলে পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুরো চিত্র তুলে আনলে এর চেয়েও ভয়াবহ অনিয়ম বেরিয়ে পড়তে পারে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। যে দেশে ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায় সেখানে প্রকল্পের কাজ নিয়মমাফিক হবে এমন আশা করাই দুরাশা।
গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে কতগুলো ঝকঝকে নতুন ঘরের ছবি ঘুরছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নতুন ঘরের একাংশ ধসে গেছে। কোনো ঘরের দেয়ালে মস্ত ফাটল। বেশ কিছু ঘর গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। ২২ জেলার ৩৬ উপজেলায় অতি দরিদ্র গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মিত এসব ঘরের ছবি দেখে জাতীয় সম্পদের নিদারুণ অপচয়ে বিবেচনাপ্রসূত সবার দুঃখ হওয়াই স্বাভাবিক। দরিদ্রদের জন্য কষ্ট হয় এ জন্য যে, তাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল পাকা ঘর দেয়ার। বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য তৈরি এ ঘরের বরাদ্দপ্রাপ্তদের অনেকের কাছ থেকে ২৫-৩০ হাজার করে টাকা নিয়েছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা; এমন খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন শোনা যাচ্ছে, সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। বসবাসের আগেই যেসব ঘর ভেঙে যায় সেই প্রকল্পের অন্য সব ঘর কত দিন টিকবে তা নিয়ে সংশয় আছে। কাজের মান এবং ঘর নির্মাণের স্থান নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অনেকে বলেছেন, বাকি ঘরগুলোও যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
বর্তমান সময়েই দেশে চালু হয়েছে আরেকটি নজির স্থাপনকারী ঘটনা। সরকারি নির্মাণকাজে ঠিকাদারদের রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ঢালাই দেয়া। স্কুল ভবন, গ্রামীণ সড়ক ইত্যাদি নির্মাণে এই নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এ জন্য অভিযুক্ত কোনো একজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়নি।
‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পটি ছিল পাঁচ বছর মেয়াদি। ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। চারবার ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে এটি এখন প্রায় আট হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে রূপ নিয়েছে। মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ বছর। এর মধ্যেও সম্পন্ন হবে কি না বলার সুযোগ নেই। গরিববান্ধব সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রামীণ দরিদ্রদের কর্মসংস্থান বিষয়ক। গরিব তরুণদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজনই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভুয়া নামের তালিকা তৈরি করে বিল পাস করা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে। একই ভাগ্য বরণ করে উত্তরাঞ্চলের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ কর্মসূচি (উদকনিক)। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) অধীনে ওই কর্মসূচিতে অর্থের বিনিময়ে সচ্ছলদের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে। ফলে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হন। এভাবে উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। মানুষ মাঠপর্যায়ে এসব দেখে দেখে অতিষ্ঠ। তারা এর শেষ দেখতে চায়।


আরো সংবাদ



premium cement