২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বর্ধমান শিশু নির্যাতন

অবক্ষয় গ্রাস করছে ভবিষ্যৎ

-

আগামীর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কেমন হবে আজকের আমাদের চর্চিত জীবনের ওপর তা নির্ভর করছে। প্রতি মুহূর্ত আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে চলেছি। আজকের একটি শুভ কাজের চর্চার বিকশিত ফল আমরা আগামীতে ভোগ করব। একইভাবে একটি মন্দ কর্ম চর্চার বিষফলও ভবিষ্যতে আমাদের আস্বাদন করতে হবে। কথাগুলো আমরা বলছি শিশুদের প্রসঙ্গে। আজকের শিশুরা আমাদের আগামী দিনের কাণ্ডারি। যত ভালো ও শুভ কাজ আমরা করব তা ভবিষ্যতে নিয়ে যাবে শিশুরা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমাদের জন্য ভালো সংবাদ খুব কম রয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সৃষ্ট অবক্ষয় সমাজ ও পরিবারিক জীবনে বর্ধিত মাত্রায় পড়ছে। চার দিকে লোভলালসার চর্চায় শেষ পর্যন্ত শিকার হচ্ছে শিশুরা।
মানুষের মধ্যে কী মাত্রায় লোভ ও শত্রুতা চরিতার্থের জেদ চেপে বসেছে সুনামগঞ্জের দিরাইতে গত বছর ঘটা একটি ঘটনা থেকে আঁচ করা যায়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজের শিশুসন্তানের ওপর এক ভয়াবহ নৃশংসতা চালায় পিতাসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয়। পাঁচ বছরের শিশুকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে। লাশের পেট চিড়ে ঢুকিয়ে রাখে দু’টি ছুরি। দু’টি কানও কাটা হয়। কেটে নেয়া হয়েছিল শিশুটির যৌনাঙ্গ। জমিজমা নিয়ে বিরোধ কিংবা অন্য কোনো কারণে সৃষ্ট বিরোধের পর প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মামলায় জিততে তারা এই পৈশাচিক কাণ্ড করে। আমরা দেখেছি কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণ করানোর পর হত্যার ঘটনা। শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে খুনের ঘটনা দেশে ক্রমবর্ধমান। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের হিসাবে চলতি বছরে প্রথম ছয় মাসে শিশুদের প্রতি এক হাজার ৩৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরে প্রথম ছয় মাসে এ ধরনের সহিংসতার সংখ্যা ছিল ৯৭৭টি।
শিশুদের প্রতি সহিংসতার মধ্যে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ও অপহরণ উল্লেখযোগ্য। মানবাধিকার সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শিশুদের বিরুদ্ধে এসব অপরাধের মাত্রা বেশ কয়েক বছর ঊর্ধ্বগামী। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। গত বছরের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে ট্রাইব্যুনালে ৩০ হাজার ২৭২টি মামলা হয়েছে। এ বিপুল মামলার বিপরীতে কতটির বিচার সম্পন্ন হয়েছে সে ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক খবর নেই। সহযোগী এক দৈনিকে শিশু নির্যাতন নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে সমাজবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের বর্ধমান প্রবণতায় বিচারের দীর্ঘসূত্রতাকে দায়ী করেছেন।
পরিবার ও সমাজে দ্রুত অবক্ষয়ের বিস্তার হচ্ছে। এর কারণ নিহিত রয়েছে রাজনৈতিক ব্যবস্থায়। প্রশাসনে দুর্নীতি অনিয়ম আশকারা পাচ্ছে। পদ-পদবির মালিক হওয়া ও পদাবনতি ঘটানোর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নীতি-নৈতিকতা কোনো মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। ফলে একজন নীতিবান যখন তিরস্কৃত হন, পদাবনতির শিকার হন, আবার একজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি পাচ্ছেন পদোন্নতি। এ কারণে সমাজে ও পরিবারে বিস্তৃতি ঘটছে লোভলালসার, যার সহজ শিকার হচ্ছে শিশুরা। মাদক ও প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারকেও বিশেষজ্ঞরা শিশু নির্যাতনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
শিশুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার দু’টি দিক। এক দিকে অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাচ্ছে না। অর্থাৎ বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের গ্রাস করেছে। অন্য দিকটা হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত অস্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা। এ ব্যবস্থা আবার পূর্ববর্তী অব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করে অবক্ষয়কে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এ কথা বলা যায়, চলমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে আমরা অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি প্রজন্ম পাবো। যারা বড় হয়ে অবক্ষয়কে আরো বাড়িয়ে তুলবে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। যেকোনোভাবে হোক শিশুদের ওপর নির্যাতন ও নৃশংসতা রোধ করতে হবে।ং


আরো সংবাদ



premium cement