সচল রাখুন অর্থনীতি
- ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০০:৩৪
এবার কঠোর লকডাউন এসেছে ব্যবসার ভরা মৌসুমে। প্রত্যেক বছর এই সময় সারা দেশে কেনাবেচার ধুম পড়ে। রমজান ও তার পরে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এই সময় সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি হয়। গত বছরও প্রায় একই সময় করোনার আগমনে মারাত্মক মন্দা নামে। এক দিকে দোকানপাট ঠিকভাবে খোলা রাখা যায়নি; আবার আয় না থাকায় মানুষ কেনাকাটা করতে পারেনি। এবারো ঠিক সময়মতো কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। হাটবাজার দোকানপাট শপিংমল সব বন্ধ হয়ে গেছে। আবার সাধারণ মানুষের আয়ের পথও একেবারেই সীমিত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় যারা ভেবেছিলেন, গতবারের ক্ষতি এবার কিছুটা কাটিয়ে উঠবেন তাদের মাথায় আবারো হাত পড়ল। শুধু দোকানপাটকেন্দ্রিক কেনাবেচা নয়; সামগ্রিক অর্থনীতিতে লকডাউন বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। এর ফলে সৃষ্ট মন্দা শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির কতটা অবনতি ঘটায় কেউ জানে না।
লকডাউনের মধ্যে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বণ্টনের মধ্যে বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য কারখানা খোলা রাখা হয়েছে; কিন্তু যারা এই পণ্য বিক্রি করবেন তাদের দোকানপাট শপিংমল বন্ধ। ফলে পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। লকডাউন আরোপকারী সরকারি কর্তৃপক্ষের দক্ষতা ও আন্তরিকতার অভাবে পণ্যবাহী যানবাহন যেমন রাস্তায় চলতে পারে না; আবার নজরদারির অভাবে এসব যানবাহনের ওপর চাঁদাবাজি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রমজানের মৌসুমে বস্ত্র ও পাদুকা ব্যবসা সবচেয়ে জমজমাট থাকে। স্থানীয় উৎপাদকরা এর প্রধান জোগানদার। কারখানা খোলা রেখে এর উৎপাদন চলছে; কিন্তু একের পর এক কঠোর লকডাউনে এর বণ্টন বিপণন একেবারে ধসে পড়েছে। এর মধ্যে রড সিমেন্টের মতো পণ্যের বিতরণ বিপণনে মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। সারা দেশে বিপুল নির্মাণকাজ চলছে। লকডাউন হলে নির্মাণশিল্পের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে যাচ্ছেন বিপুলসংখ্যক নির্মাণকর্মী। এ ছাড়া আসবাবপত্র তৈরি ও কেনাবেচা একটা বিরাট ব্যবসা; এটিও থমকে দাঁড়িয়েছে। মোট কথা, সব ধরনের ব্যবসা এই লকডাউনে ধসে পড়ছে।
অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত জনশক্তি রফতানিও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছর করোনার কারণে বিদেশে কর্মী যাওয়া প্রায় সাত মাস বন্ধ ছিল। গত চার মাসে বিদেশে কর্মী যাওয়া আবার স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। সাম্প্রতিককালে বছরে গড়ে ১০ লাখ কর্মী বিদেশে যায়। গত বছর গিয়েছে মাত্র দুই লাখ ১৭ হাজার। আবারো বিদেশে কর্মী যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। খবরে জানা যাচ্ছে, কঠোর লকডাউনের কারণে ৩০ হাজার কর্মীর বিদেশে যাওয়া আটকে গেছে। তারা বিদেশে যাওয়ার সবরকমের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে। এ জন্য তাদের নিজের পকেট থেকে বিপুল অর্থ খরচ করতে হয়েছে। সময়মতো তারা যদি বিদেশে না যেতে পারেন, তাহলে তাদের এ বিপুল অর্থ খরচ পুরোটাই লোকসান হয়ে যেতে পারে। নতুন করে ১৩ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সব ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। অভিজ্ঞজনরা বলছেন, এ ধরনের লকডাউনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ কর্মী গ্রহণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এমনিতে তাদের নতুন কর্মী গ্রহণে কোনো সমস্যা নেই; কিন্তু কোনো দেশ যদি নিজেই লকডাউনের মতো কঠিন বিধিনিষেধ আরোপ করে, সে দেশের জনশক্তি প্রবেশে ‘হোস্ট কান্ট্রি’ নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
করোনা যেভাবে আমাদের সমাজে সংক্রমিত হয়েছে তাতে এটি অল্পসময়ের মধ্যে বিদায় নেবে, এমন দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের একটি দেশ। এ দেশে প্রতিদিন আড়াই হাজার মানুষ মারা যায়। জীবন মরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। করোনার নামে আমরা যদি পুরো জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দিই, তাহলে যে পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবো তা সামাল দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সদা সচেতনতা। অথচ সেই দিকে আমাদের নজর কম। সারা বছর লকডাউন দিয়েও কি সরকার করোনা থেকে বাঁচাত পারবে? এই অবস্থায় জীবনের প্রয়োজনে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখতে হবে। সরকারকে ১৮ কোটি মানুষের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা