২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
তরমুজের ভালো ফলন সত্ত্বেও দুশ্চিন্তা

সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করুন

-

‘বাজার এখন তরমুজে সয়লাব। এবারই প্রথম দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ খুচরাপর্যায়ে মেপে বিক্রি হচ্ছে। দামও বেশি। অথচ সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলেও তরমুজের আবাদ ও উৎপাদন আশাব্যঞ্জক হারে বাড়লেও এখন পর্যন্ত উৎপাদনকারী কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। এবারো দেশের মোট আবাদ ও উৎপাদনের প্রায় ৬৫ শতাংশ তরমুজই দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলায় হয়েছে। তবে এবার মাঠপর্যায়ে এক কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র সাত থেকে আট টাকায়। অথচ কয়েক হাত ঘুরে সেই তরমুজই ভোক্তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে।’
একটি সহযোগী দৈনিকে এর বরিশাল প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনের শুরুতেই কথাগুলো বলা হয়েছে। দেশের বাজারে ইতোমধ্যে রসালো ও সুমিষ্ট তরমুজ বিক্রি হতে শুরু করেছে। এ বছর অনুকূল আবহাওয়ায় তরমুজের উৎপাদন ভালোই হয়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে তরমুজের মান কিছুটা নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ দিকে করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী আবার লকডাউনে এই ফলের বাজারজাতকরণ, তথা উৎপাদনকারীরা যথাযথ দাম পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, রসালো ফল তরমুজের উৎপত্তি আফ্রিকা মহাদেশে। এখন বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ দেশেই এর আবাদ চলছে। আমাদের দেশে এ ফল দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গরমকালে এবং বিশেষত রোজার মাসে তরমুজের চাহিদা ব্যাপক। মূলত মৌমাছির দ্বারা পরাগায়ন ঘটলে তরমুজের উৎপাদন সুনিশ্চিত হয়। বর্ষজীবী লতানো গাছের ফল, তরমুজ চাষ সম্ভব বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ পর্যন্ত সব ধরনের মাটিতেই। দেশের দক্ষিণ অংশে লোনামুক্ত চরের পলি মাটিতে তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। তাই ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশাল প্রভৃতি জেলায় তরমুজের ব্যাপক আবাদ লক্ষণীয়। চলতি মৌসুমে বাংলাদেশে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এর ২৫ হাজার হেক্টরই বরিশাল অঞ্চলে। কৃষি বিভাগ আরো জানায়, গতবার ৩৮ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে ১৬ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল। এবার কেবল বরিশাল অঞ্চলেই ১১ লাখ টন উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হয়েছে। এবার এ অঞ্চলে তরমুজের আবাদ চলছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার হেক্টর কম জমিতে। ভোলা ও পটুয়াখালীতে গত বছর একাধিক ঝড়ে ক্ষতি হওয়ার দরুন এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরো জানানো হয়, অতীতের চেয়ে তরমুজের মিষ্টি স্বাদ বেড়েছে। ওজন একেকটার আট থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আগে ‘পতেঙ্গা’ ও ‘গোয়ালন্দ’ জাতের তরমুজ চাষ করা হতো। এখন ইউরোপ, প্রাচ্য ও গ্রীষ্ম মণ্ডলের নানা রকম উন্নত জাতের তরমুজের আবাদ করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে; যেগুলো উচ্চ ফলনশীল ও সুমিষ্ট। তবে আজো দেশে তরমুজের প্রক্রিয়াজাতকরণ উন্নত করে খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন শুরু হয়নি। বরিশালে জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবি মোতাবেক, ‘কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা’ প্রতিষ্ঠা করা হলে এলাকার উন্নতমানের তরমুজ ও পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফল প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হতো। তা হলে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতিও ঘটত এ অঞ্চলে।
আমরা আশা করি, তরমুজের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা হবে। কারণ তা জরুরি তরমুজচাষিদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য।


আরো সংবাদ



premium cement