সবার সঙ্কট মোচনই রাষ্ট্রের দায়িত্ব
- ১২ মার্চ ২০২১, ০৪:০০
নয়া দিগন্তের রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতার পাঠানো একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম : ‘নানা সঙ্কটে মানবেতর জীবন রাঙ্গাবালীর রাখাইনদের’।
এর শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই থেকে আড়াই শ’ বছর আগে আরাকান থেকে এসে রাঙ্গাবালী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বসতি গড়ে তোলে রাখাইন সম্প্রদায়। উপকূলীয় এই নির্জন বনভূমিকে বাসযোগ্য করার কারিগর রাখাইনরাই। সে সময় থেকে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি তাদের বংশবিস্তার ঘটেছে। তবে প্রভাবশালীদের দম্ভ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা প্রভৃতি কারণে এ সম্প্রদায় বিলুপ্তির পথে। কাগজপত্রে কর্মকাণ্ড দেখা গেলেও বাস্তবে তাদের জন্য কিছু করতে দেখা যায় না। জানমাল রক্ষাসহ বিভিন্ন সঙ্কট থেকে নিরাপত্তার জন্য মিয়ানমার থেকে নৌপথে দক্ষিণবঙ্গে আগমন ঘটেছিল রাখাইনদের। এরপর অনাবাদি জমি চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহের সূচনা। সেই সাথে সাগরের মাছ আর বনের পশুপাখি শিকারই ছিল তাদের প্রধান পেশা। তাদের বসতি ছিল উল্লেখ করার মতো বিষয়। তারা নিজেদের ঐতিহ্য সংরক্ষণে ছিল সচেষ্ট।
এসব তথ্য থেকে স্পষ্ট, রাখাইনরা এ দেশের সমতল ও পার্বত্য অধিবাসীর বিপুল অংশের মতো বহিরাগত এবং তারাও সাধারণত অন্যদের মতো বনজঙ্গল কেটে আবাস গড়ে তুলেছে। অপর দিকে রাখাইনরা বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগ মোকাবেলা এবং কঠোর জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে আছে অন্তত আড়াই শ’ বছর ধরে। এভাবেই তারা দুর্গম অরণ্য মানুষের বাসযোগ্য এবং সেখানে চাষাবাদ করেছে। অতীতে যখন এ দেশে লোকসংখ্যা ছিল কম এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল প্রচুর, তখন যা স্বাভাবিক, সেটিই অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো রাখাইনরাও করেছে।
টহরঃু ঃযৎড়ঁময ফরাবৎংরঃু (বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য) নীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বাসী। সে মোতাবেক, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির পাশাপাশি দীর্ঘকাল ধরে বাস করছে রাখাইনসহ নানা জনগোষ্ঠী। বিশেষ করে পাহাড়ি জেলাগুলোতে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক বহু জনগোষ্ঠীর বসবাস। বিভিন্ন অঞ্চলের সমতল জেলাগুলোতে আছে বহু ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বসতি। এ দিকে রাঙ্গাবালীতেও বাস করছে অনেক রাখাইন পরিবার। কিন্তু নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে গত কয়েক দশকে তাদের অনেকেই অন্যত্র চলে গেছে। বাকিরা খাদ্য, ভূমি, মাতৃভাষা, ঐতিহ্য, নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়ে শঙ্কিত। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাখাইনদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ ছাড়াও মিথ্যা মামলার কথা উঠেছে। এ অবস্থায় দুই হাজারেরও বেশি পরিবার ভিটামাটি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা যায়। তাদের ভিটামাটি রক্ষার ব্যাপারে প্রশাসনিক উদাসীনতায় কোনো কোনো পরিবার আরাকানে চলে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। একদা স্থানীয় রাখাইনদের অনেকে প্রভাব ও বিত্তবেসাত অর্জন করে ‘জমিদার’ হিসেবে পরিচিত ছিল। দিন দিন দুর্গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে রাখাইনরা বহু ক্রীড়া ও উৎসবসহ নিজেদের সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে। তদুপরি, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাঙালিদের মতো তাদের বহু বসতি বিলীন হয়ে গেছে। এতে অনেকের প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটেছে। রাখাইনরা কম শিক্ষিত বিধায় লোভী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ জবরদখল করা সহজ হয়েছে। অন্য দিকে তাদের অনেকে কুচে ও কাঁকড়া বেচে কোনো মতে সংসার চালাচ্ছে। তবে তাদেরও ভিটা হারানোর শঙ্কা বিদ্যমান। ৯৫ বছর বয়সী জনৈক রাখাইন বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীনরা আমাদের জমি রেকর্ড করে আমাদের সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমরা তো অপরাধ করিনি।’
আমরা আশা করি, রাষ্ট্র তার সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং মৌলিক চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নেবে। বাঙালি, পাহাড়ি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রভৃতি নির্বিশেষে সবার প্রয়োজন পূরণ ও কল্যাণ সাধনের সাংবিধানিক দায়িত্ব সরকারকে পালন করতে হবে। এটাই গণতন্ত্রের বিধান এবং আইনের শাসনের জন্য অপরিহার্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা