২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ইটভাটা উচ্ছেদের পরও বহাল!

মালিকরা বেপরোয়া হওয়া রহস্যজনক

-

সারা দেশে ইটের ভাটা নিয়ে একধরনের তণ্ডব চলছে। কোথাও ধানী জমিতে ইটভাটা, কোথাও আবাদি জমির উর্বর মাটি কেটে ভাটার কাজে ব্যবহার, কোথাওবা ভাটায় সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে মূল্যবান বনজসম্পদ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার, আবার কোথাও ইটভাটায় নিচু চিমনি ব্যবহার করে পরিবেশদূষণ ইত্যাদি চলছে অব্যাহতভাবে। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সংযোজনকারী মহাসড়কে একবার যাতায়াত করলেই বুঝা যায়, ইটভাটার নামে কত ব্যাপক যথেচ্ছাচার চলছে আইন লঙ্ঘন এবং পরিবেশ দূষণ করে। পত্রপত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই ইটভাটার ব্যবসার আড়ালে দেশব্যাপী কী অবস্থা বিরাজ করছে, তার ওপর সচিত্র প্রতিবেদন, সংবাদ এবং সম্পাদকীয় কিংবা নিবন্ধ ও চিঠিপত্র ছাপা হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু ইটভাটার মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব আগের মতোই রয়ে গেছে। এর একটি নজির, জাতীয় দৈনিকে সম্প্রতি প্রকাশিত আলোচ্য রিপোর্ট। শরীয়তপুর জেলার খবরটি প্রমাণ করছে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ কতটা হচ্ছে এবং আইনের প্রতি আমাদের অনেকের শ্রদ্ধা কিংবা পরিবেশদূষণ প্রতিরোধে আমাদের সতর্কতা কতটুকু, তার ব্যাপারে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, শরীয়তপুর জেলায় ১৯টি ইটভাটার বৈধতা নেই। এর মধ্যে আটটির নেই অনুমতি এবং বাকিগুলোর অনুমোদন নবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ। আর যেসব ইটভাটা বৈধতার দাবি করছে, তাদেরও বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে সুনির্ধারিত আইন-কানুন লঙ্ঘন করেই। ফসলি জমি, আবাসিক এলাকা, বাজার, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ প্রভৃতি ঘেঁষে এগুলো চলছে। অভিযোগ রয়েছেÑ চাষের জমির উপরি ভাগ কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটাতে। এমনকি কোনো কোনো ভাটামালিকও নাকি ছাড়পত্র পেয়ে গেছেন। আবার অনেকে পরিবেশের কিংবা প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছাড়াই ভাটার কার্যক্রম অব্যাহত রাখছেন। কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে এসব চলতে পারে কিভাবে, তা বুঝা কঠিন। অভিযোগ আছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি সত্ত্বেও জনবসতির পাশ থেকে ইটভাটা সরানো যাচ্ছে না। শরীয়তপুরের একজন প্রধান শিক্ষক কথাগুলো বলেছেন। সেখানে ইটভাটার উৎপাদন ও ব্যবসার কাজে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না মালিকের। অথচ এ ভাটাতে ২০১৯ সালের শেষ দিকে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দেখেছিল, তাদের কোনো প্রকার অনুমোদন নেই। তখন ইটভাটার কেবল অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়নি, দুই লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল সেখানে ইট তৈরি করা ও পোড়ানো। তদুপরি, নেয়া হয়েছে মুচলেকাও। গত জানুয়ারিতে আবার অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে, এই ইটভাটার আগের মতো অনুমোদনহীন দশা। ফলে এবার করা হয়েছে তিন লাখ টাকা জরিমানা। তবুও মালিক ভাটার কাজ জারি রেখেছেন প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে।
জানা যায়, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে ২০১৯-২০২০ সালে আটটি ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় স্থানীয় প্রশাসন। কাগজপত্র না পেয়ে তখন গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে ইটভাটার অবকাঠামো। সেই সাথে, বানানো ইটগুলো পানি দিয়ে গলিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে এ বছরের গোড়া থেকেই আবার ইট তৈরি করা হচ্ছে এসব ভাটায়। জানা গেছে, ডামুড্যা উপজেলায় কৃষিজমিতে একটি অবৈধ ইটভাটা চলছে দীর্ঘ ৯ বছর। এর মালিক সাংবাদিককে দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন, ‘ম্যানেজ করেই চলছি। সাংবাদিকরাই যত সমস্যা।’ অপর দিকে শরীয়তপুরের ডিসি বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। তবুও নির্দেশ উপেক্ষাপূর্বক যারা ভাটা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর পদক্ষেপ। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।’
আমাদের প্রত্যাশা, দেশের সর্বত্র অবৈধ সব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, যাতে কেউ পরিবেশ বা জনস্বার্থের ক্ষতি কিংবা আইন অমান্য করার সাহস না পায়।


আরো সংবাদ



premium cement