২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মহামারীর সামগ্রিক প্রভাব

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গুরুত্ব দিন

-

করোনার প্রভাবে দেশে নিম্ন আয়ের মানুষ কতটা বিপদে পড়েছেন বেসরকারি দু’টি গবেষণা সংস্থার জরিপে সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। যদিও আগে থেকেই দেশের অর্থনৈতিক বেহাল দশা আঁচ করা যাচ্ছিল। মাত্র চারটি জেলায় এই জরিপ চালানো হলেও নিঃসন্দেহে বলা যায়, মূলত চারটি জেলার চিত্রই এখন সারা দেশের বাস্তবতা। সরকারের তরফ থেকে যতই উন্নয়নের ঢাক-ঢোল পেটানো হোক না কেন, তাতে প্রকৃত বাস্তবতা ঢেকে রাখা সম্ভব নয়।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কিছু দিন পর থেকেই সব মহল থেকে বলা হচ্ছিল, মহামারীর কারণে দেশের অধিকাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় কমে গেছে এবং তারা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এই দুর্দিনে তাদের রাষ্ট্রীয় যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। যাতে তারা বিপদ কাটিয়ে ফের স্বভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। কিন্তু দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে সরকারি-বেসরকারি যে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে এবং এখনো করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ফের সে কথারই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল নতুন এই জরিপের তথ্য-উপাত্তে।
করোনার প্রভাব নিয়ে জরিপ পরিচালনাকারী গবেষণা সংস্থা দু’টি বলছে, ২০১৯ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের নভেম্বরে দেশের চারটি জেলার মজুরি ও বেতনভুক মানুষের প্রায় ৭০ শতাংশের আয় কমেছে। ২৮ শতাংশের আয় অপরিবর্তিত রয়েছে। ২ শতাংশের আয় বেড়েছে। এই শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে অতি দরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র এবং দারিদ্র্যসীমার উপরে ছিল; কিন্তু করোনার প্রভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছেন তারা। আর আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশের মুনাফা কমেছে। করোনার সময়ে ব্যবসা বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হয়েছে ৩১ শতাংশকে। গত মঙ্গলবার ‘মহামারী এবং বাংলাদেশের যুব জনগোষ্ঠী : চারটি নির্বাচিত জেলার জরিপের ফলাফল’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে জরিপ পরিচালনা করে। বরগুনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের ১৫৪১টি খানার ওপর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করা হয়।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এই চার অঞ্চলে করোনার প্রকোপের পর মজুরিভিত্তিক চাকরিজীবীর মধ্যে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ জনগোষ্ঠী তাদের চাকরি পরিবর্তন করেছে। মজুরি কমে যাওয়ায় ৪৮ শতাংশ চাকরি পরিবর্তন করেছে। ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশের মজুরি কেটে দেয়া, ১১ শতাংশকে চাকরিচ্যুত করা ও ১৫ শতাংশকে জোরপূর্বক চাকরি বদল করানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে। আবার চুক্তিভিত্তিক চাকরিজীবীর মধ্যে ৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। পণ্য বিক্রি ও মুনাফা কমে যাওয়া আয় কমে যাওয়ার মূল কারণ। জরিপের ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা গ্রামের এবং ১৫ শতাংশ শহরের।
দেখা গেছে, করোনার সময় তুলনামূলকভাবে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প। অনেক তরুণ এই এসএমই খাতের উদ্যোক্তা। সরকারের উচিত একটা ডাটা তৈরি করে তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করা। কারণ নীতিনির্ধারণী মহলের স্মরণে রাখা উচিত, বাংলাদেশ জনমিতির যে সুবিধাজনক অবস্থান উপভোগ করছে তা কাজে লাগানোর জন্য তারুণ্যের সঠিক ব্যবহার করা জরুরি। তবে দুঃখজনক হলোÑ যার ব্যত্যয় আমরা অনুধাবন করি সার্বিক বেকারত্বের হার অপেক্ষা তরুণ জনগোষ্ঠীর অধিকতর বেকারত্বের হার এবং শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে থাকা তরুণ সমাজের উপস্থিতির হার এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ঝরে পড়া তরুণদের উপস্থিতি থেকে।
আমরা মনে করি, নতুন জরিপে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর যে চিত্র উঠে এসেছে, তা লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উল্লেখিত তথ্য আমলে নিয়ে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এটিও মনে রাখা দরকার, গতানুগতিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে করোনাকালীন অভিঘাত মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এ জন্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে করোনা-পরবর্তী সময়ে নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারুণ্যের কর্মক্ষমতা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। তবেই সম্ভব করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশীদের ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা জুরাইনে রিকশাচালকদের অবরোধ : ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী : আইএসপিআর বগুড়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান : বিদেশী পিস্তলসহ ৩ আ’লীগ নেতা গ্রেফতার মুন্সীগঞ্জে মহাসড়কের পাশ থেকে কিশোরের লাশ উদ্ধার বুড়িচংয়ে অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের পরিবারের সাথে স্মরণসভা শ্রীপুরে মহিলা আ’লীগের সভাপতি গ্রেফতার মুডি’স রেটিং অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতিফলন নয় : বাংলাদেশ ব্যাংক নাটোরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করব : ধর্ম উপদেষ্টা ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টে ভাঙল ৭২ বছরের রেকর্ড

সকল