২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`
রমজানে জ্বালানি সঙ্কটের শঙ্কা

জনভোগান্তি যেন না হয়

-

শীতকাল শেষ। গরম পড়তে শুরু করেছে। ঘরে ঘরে ফ্যান চলছে। আর এতেই বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু করতে হয়েছে। অথচ গত ১৫ বছরে শুধু বিদ্যুৎ খাতে জনগণের লাখো কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই টাকার যথাযথ ব্যবহার হয়েছে কি না সে প্রশ্ন তোলার অধিকারও তাদের ছিল না। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ইত্যাদি নানা নামে ব্যাঙের ছাতার মতো ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে ১৫ বছরের অবৈধ সরকার। এসব ছিল জনগণের অর্থ তসরুপের ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। গ্যাস নিয়েও স্বৈরাচারী সরকার একই ষড়যন্ত্র করেছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে বেশি দামে এলএনজি আমদানি শুরু করে। এতে জনগণের অর্থের যেমন অপচয় হয় তেমনি জ্বালানি খাতে দেশের স্বনির্ভরতার সম্ভাবনাও ধ্বংস হয়ে যায়। অর্থ লোপাট ও বিদেশে পাচারের অকল্পনীয় সব কেচ্ছাকাহিনী গত ছয় মাস ধরে সবিস্তারে জানতে পেরেছে দেশবাসী। দেশের অর্থনীতি কোন অতলে নিয়ে ঠেকিয়েছে হাসিনা সরকার তাও এখন স্পষ্ট। বিদ্যুৎ বা গ্যাস নিয়ে ভোগান্তির মূল কারণ আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি।
আসন্ন গ্রীষ্মে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হতে পারে। এতে করে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছতে পারে বলে গণমাধ্যমে জল্পনা শুরু হয়েছে। রমজানে গ্যাসের চাহিদা বাড়ে, গরমে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। একই সময়ে শুরু হবে কৃষিকাজে সেচের মৌসুম। সব মিলিয়ে মার্চ-এপ্রিল থেকে বিদ্যুতের চাহিদা দেড় গুণ হবে। কিন্তু সরবরাহ সেভাবে বাড়ানো যাবে না। অর্থসঙ্কটে বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাহিদা অনুসারে জ্বালানির জোগান দেয়া যাবে না। হাসিনা সরকার বিদ্যুৎ কোম্পানির বিপুল পাওনা বকেয়া ফেলেছে। সে টাকা না পাওয়ায় কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ফার্নেস অয়েল ও কয়লার মতো জ্বালানি আমদানিতে সমস্যায় পড়বে। বিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হলে দরকার হবে দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫-১৬ হাজার টন ডিজেল। গ্যাস লাগবে দিনে দেড় শ’ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে সরবরাহ ৯০ থেকে ৯২ কোটি ঘনফুট। মার্চে তা ১৩০ কোটিতে উন্নীত করতে বাড়তি এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। মার্চের জন্য আড়াই থেকে তিন লাখ টন কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। আর বিতর্কিত ভারতীয় কোম্পানি আদানি থেকে ১৬ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। এটি নিশ্চিত করতে পেরেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সামনের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ১৮ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের ধারণা, ঘাটতি হতে পারে দেড় হাজার মেগাওয়াটের মতো।
সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের আন্তরিক চেষ্টা থাকলেও এটি নিশ্চিত যে, জনগণকে সম্ভবত দুর্ভোগের জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। তবে দেশে এখন আর চোর সরকার নেই। যারা আছেন তারা জনদুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করছেন বলে আমাদের ধারণা। শুধু শীতাতপ যন্ত্রের তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করলে কমপক্ষে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের সাশ্রয় হতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা সে নির্দেশনা দিয়েছেন।
জনগণের দুর্ভোগ দূর করা সরকারের দায়িত্ব। রোজায় ভোগান্তি নয়, মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের অব্যাহত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল